কীভাবে পর্ন আসক্তি আমার চাকরি, স্ত্রী এবং সামাজিক খ্যাতি হারানোর কারণ হয়েছে

কীভাবে পর্ন আসক্তি আমার চাকরি, স্ত্রী এবং সামাজিক খ্যাতি হারানোর কারণ হয়েছে

আমার বয়স তখন তের। দিনটি এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে। কারণ, সেই দিনটি আমার পুরো জীবনটাই তছনছ করে দেয়।
.
আমার একজন বড় ভাই আছে। তখন তার বয়স ছিল পনের বছর। একদিন সে আমার রুমে এসে একটা পর্ন ভিডিও দেখিয়েছিল। আমি কৌতূহলী থাকলেও দেখার সময় আমার কেমন জানি অদ্ভুত লাগছিল। ভাইয়া বলেছিল এগুলো কোনো ব্যাপার না। আমিও সেদিন তার কথা বিশ্বাস করেছিলাম। 
.
কিন্তু ব্যাপারটা শুধু ভিডিও দেখানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। যখন আমার বয়স ১৪, আমার ভাই তার বান্ধবীকে নিয়ে আমার রুমে ঢুকে। আমাকে এমন এক ভিডিও দেখায় যেখানে দুইজন ছেলে এবং একজন মেয়ে নিজেদের মধ্যে কিছু করছে। আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু কৌতূহলী ছিলাম ঠিকই। সে বলল,- “চল আমরা এদের মতো করি!” ওর বান্ধবী এবং আমি রাজি ছিলাম না কিন্তু, সে জোরাজোরি করতে লাগল। বলল, খুব মজার হবে; ঠিক এই ভিডিওর মতোই ।
.
বুঝতে পারছিলাম কাজটা কতোটা জঘন্য হবে। তারপরও আমি এতে জড়িয়ে গেলাম। মেয়েটি এই ঘটনায় চরম মানসিক আঘাত পায়। ভোগের পণ্য মনে করতে থাকে নিজেকে। মনের মধ্যে অনুশোচনা আসে। কিছুদিন পর শুনেছিলাম আমার ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। 
.
সময় যেতে থাকে, কিন্তু আমি আটকা পড়ে গিয়েছিলাম ফাঁদে
========================
কৈশরের সময়টা দেখতে দেখতে কেটে গেল। বয়স বাড়তে থাকল। ভালো একটা চাকরি শুরু করেছিলাম। মনে করতাম আমার জীবনের সবকিছু ঠিকঠাকই আছে। কিন্তু পর্ন দেখার অভ্যাসটা আমি তখনো ছাড়তে পারিনি। প্রত্যেক রাতেই দেখতাম। 
.
বিয়ের পর, স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু ও যখনি প্রত্যাখ্যান করত, আমি গিয়ে পর্ন দেখা শুরু করতাম। একসময় অবস্থা এমন হয়েছিল যে, আমি পতিতার সাথে পর্যন্ত রাত কাটিয়েছিলাম।
.
পর্ন আমার জীবনের সাথে মিশে গিয়েছিল। আমি বিভিন্ন অসামাজিক ক্লাবের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। নানা ধরণের অনৈতিক কাজ থেকে আনন্দ নেওয়া শুরু করলাম। নিজের বিবেককে কোনো প্রশ্নই করতাম না। করবই বা কেন? আমি মজা পেতাম। ভাবতাম এটা তো কারো ক্ষতি করছে না, তাহলে সমস্যা কোথায়? অথচ তখনো আমি বুঝিনি যে এই অভ্যাস যার সবচেয়ে বড় ক্ষতি করছে সে আমি নিজেই। 

যখন সব মজার অবসান ঘটল
======================
যদিও কিছুদিন সময়টা মজায় কাটছিল, তবে একটা সময় পর সবকিছুই ম্লান হওয়া শুরু করল। স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। কাজের সময় পর্ন দেখতাম বলে চাকরিটাও চলে গেল। একজন এস্কোর্ট এর সাথে থাকার কারণে গ্রেফতার হতে হয়েছিল। এতকিছুর পর নতুন চাকরি পাওয়াটা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছিল… মনে হচ্ছিল আমার জীবনটা একটা নষ্ট চক্রের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। 
.
আমি এখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিচ্ছি। এ সাহায্য আমার খুবই প্রয়োজন। আমি সবসময় সেই দিনটির কথা চিন্তা করি যেদিন থেকে সবকিছুর শুরু। এটা কি আসলেই আমি। আমি কি আসলেই আমার জীবনটা এরকম চেয়েছিলাম, নাকি পর্ন আমার ১৩ বছরের সুন্দর মনটাকে বিকৃত করে দিয়েছিল?
.
আমি আমার জীবনের সত্যটা সবার সামনে তুলে ধরলাম যাতে সবাই পর্নের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারে। পর্নের জন্য জীবনটা ধ্বংস করে দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
.
এই গল্প থেকে আমরা কী শিখলাম?
=========================
এই বেদনাদায়ক গল্পটি থেকে আমরা বুঝতে পারলাম পর্ন ব্যক্তি জীবনে কত বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। অথচ পর্ন আসক্তিকে অনেকে তেমন কোনো গুরুত্বই দিতে চান না।
.
পর্ন দেখার অভ্যাসটা একটা ফাঁদের মতো। যারা নিয়মিত দেখে তারা খুব সহজে এই ফাঁদ থেকে বের হতে পারে না। ভয়াবহভাবে আসক্ত হয়ে যায়। এই আসক্তি মানুষকে সবার থেকে আলাদা করে দেয়। ফলে তারা বন্ধুদের সাথে ভালোভাবে মিশতে পারে না। নতুন কোন শখ তো ভালো লাগেই না, পুরোনো শখগুলো থেকেও আলাদা হয়ে যায়। জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। [১]
.
এমন হওয়ার কারণ হলো, পর্ন দর্শকেরা এর ওপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে যে, তাদের মনে হতে থাকে, বাস্তব জীবনের সেক্সের চেয়ে পর্ন দেখায় বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়।[২] 

এই দুষ্ট চক্র ভাংগার জন্যে, বিশ্বাসযোগ্য কারো সাহায্য নেওয়া জরুরী। আসক্তির ঝোঁক কমে গেলে যদি আর্থিক সামর্থ থাকে, তাহলে বিয়ে করে ফেলুন।
.
এই আসক্তি থেকে মুক্ত হওয়ার আনন্দ সত্যিই অসাধারণ। যারা পর্ন থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছেন, তারা নিজেরাই বলেছেন যে, আগের চেয়ে তারা কতটা সুখী, আত্নবিশ্বাসী এবং মানসিকভাবে সুস্থ। তারা প্রিয়জনের সাথে সম্পর্কের বন্ধন মজবুত করতে পারে। কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করে। জীবনকে উপভোগ করতে পারে। কে না চায় এমন হতে!
.
আপনি নিশ্চয়ই চান নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসতে। তার সাথে সৎ থাকতে। আপনি নিজের সাথেই যদি সৎ থাকতে না পারেন তাহলে তার সাথে কীভাবে পারবেন বলুন। তাই বিয়ের আগে থেকেই পর্ন থেকে সরে আসার দৃঢ় সংকল্প করুন। যে জিনিসটা সম্পর্ক নষ্ট করে, সেটার পেছনে ঘন্টার পর ঘন্টা নষ্ট করার কোনোই মানে হয় না।
.
পর্নকে জীবন থেকে দূরে রাখলে নিজের মধ্যে অনেক পজিটিভ পরিবর্তন দেখতে পাবেন। শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কোনো খেলায় নিয়মিত অংশগ্রহন করুন, জীবনে নতুন ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন, নতুন কিছু শিখুন, পরিবারসহ সুন্দর কোনো জায়গায় বেড়াতে যান, বন্ধুদের সময় দিন, এবং উত্তম জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে নিজেকে প্রস্তুত করুন।
.
বাস্তবে স্ত্রীর ভালোবাসায় আপনি প্রশান্তি খুঁজে পাবেন, যেটা পর্ন আর নকল সেক্স কখনোই আপনাকে দিতে পারবে না। 
.
অনুবাদ ও সম্পাদনা: #teamFAD

রেফারেন্স:
[1] Volkow, N. D., Koob, G. F., & Mclellan, A. T. (2016). Neurobiological Advances From The Brain Disease Model Of Addiction. New England Journal Of Medicine, 374, 363-371. Doi:10.1056/Nejmra1511480; Park, B. Y., Et Al. (2016). Is Internet Pornography Causing Sexual Dysfunctions? A Review With Clinical Reports. Behavioral Sciences, 6, 17. Doi:10.3390/Bs6030017

[2] Volkow, N. D., Koob, G. F., & McLellan, A. T. (2016). Neurobiological Advances From The Brain Disease Model Of Addiction. New England Journal Of Medicine, 374: 363-371. Doi:10.1056/NEJMra1511480

COMMENTS

WORDPRESS: 0