কেন পর্ন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেবেন?

কেন পর্ন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেবেন?

কে না চায় পর্নোগ্রাফির মতো আসক্তিকর ও জীবন বিধ্বংশকারী বস্তু থেকে মুক্তি পেতে।

মুক্ত বাতাসে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে।

অথচ মুক্তির এ যাত্রা কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই শুরু হতে পারে।

এ জন্য আপনার অন্য কিছুর দিকে তাকাতে হবে না, শুধু শুরু করতে হবে।

কেন পর্ন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেবেন?

কেন মুক্তির পথে যাত্রা শুরু করতে হবে?

১) আপনি যে সাহায্য চাচ্ছিলেন তা পাবেন:

আপনি হয়ত অনেকদিন ধরে এই আসক্তি থেকে মুক্তির কোন উপায় খুঁজছেন বা কার সাহায্য পাবার আশায় বসে আছেন। কিন্তু অজানা এক ভয় আপনার প্রথম পদক্ষেপের পথেই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ যাত্রা কবে শেষ হবে? কবে আমি এই আসক্তি থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাব? নাকি আবার ব্যর্থ হব? এমন নানা চিন্তা হয়ত আপনার অন্তরে ভীতি সঞ্চার করছে। শুনুন, এসব চিন্তা বাধ দিয়ে বরং নিজেকে প্রশ্ন করুন- আপনি কত বছর ধরে পর্ন আসক্তিতে ভুগছেন? কত বছর ধরে কার সাথে ব্যাপারটা শেয়ার না করে নির্জনে এবং একাকীত্বে দিন যাপন করছেন? এভাবে আসক্তির সাইকেলে ঘুরপাক খেয়ে হতাশ হবার চেয়ে, এ সাইকেল থেকে বের হবার জন্য যা করণীয় তা নিয়ে ভাবাটাই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়?

২) আপনার প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্কের বাঁধনগুলো মজবুত করতে পারবেন:

আপনার স্ত্রী, সন্তান, কলিগ বা যারা আপনাকে ভালবাসে তারা সবাই যখন আপনার পরিবর্তন দেখবে, জানবে যে আপনি একজন ভাল মানুষ হতে চাচ্ছেন, তারা আপনার এ উদ্যোগে সমর্থন দিবে এবং কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে। ফলে আপনি হয়ে উঠবেন একজন সুখী মানুষ। শুধু তা ই না, আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, এ উদ্যোগ আপনার বিবাহিত জীবনকে ডিভোর্স এর হাত থেকে রক্ষা করবে। আপনি কি জানেন? ২০০৪ সালে ডঃ জিল ম্যানিং এর একটি গবেষণায় জানা যায়, অ্যামেরিকায় শতকরা ৫৬ টি ডিভোর্সের একটি কারণ হল, স্বামী বা স্ত্রীর যে কোন একজন অত্যধিক মাত্রায় পর্ন আসক্ত?[1]

যখন একটি সংসারে স্বামী-স্ত্রীর যে কোন একজন বা দু’জনই পর্ন আসক্ত হয়, সে সংসার সহজে টিকে না। এমনকি একসময় ডিভোর্স ই একমাত্র সমাধান বলে মনে হয়। আমি জীবনে অনেক দম্পতিকে কাউন্সেল করেছি; এখনও করছি, তাদের সবাই এ মতে বিশ্বাসী। কিছু সেক্সচুয়াল ফ্যান্টাসির কারণে জীবনের এমন ক্ষতি হোক তা আপনি নিশ্চয়ই চান না।
.
অতিরিক্ত পর্ন আসক্তি শতকরা ৫৬ টি ডিভোর্স এর জন্য দায়ী; ডঃ জিল ম্যানিং এর গবেষণাটি আসলেই চিন্তার বিষয়। ২০১১ সালে ডঃ ম্যানিং এর দেওয়া এ তথ্য নিয়ে ডঃ কেভিন বি. স্কিনার মন্তব্য করেন, তিনি বলেন, ‘অ্যামেরিকায় গত এক যুগ ধরে প্রতি বছর প্রায় দশ লাখ করে ডিভোর্স হয়েছে, এর মধ্যে অর্ধেক ডিভোর্সও যদি পর্নের কারণে হয়, তারপরও প্রতিবছর পর্নের কারণে হওয়া ডিভোর্স এর সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৫০০,০০০’।[2]

৩) কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন:

জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর দিকে তাকান। পর্ন দেখার ফলে আপনার কত গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষতি হয়েছে- ঠিকভাবে পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে পারেননি, রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। কিন্তু আপনি যদি এই আসক্তি থেকে মুক্ত হবার উদ্যোগ নেন, তাহলে আসক্তি কমার সাথে সাথে প্রতিটি কাজেই আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে, কাজ করেও মজা পাবেন। একসময় কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে আসক্তির প্রতি ঝোঁক আরও কমে যাবে।

৪) আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে:

সব মানুষই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চায়। আর তাই স্বাস্থ্যের প্রতি তারা বেশি যত্নবান হয়। পর্ন আমাদের মানসিক ও শারীরিক উভয় স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকর। কাজেই পর্ন ও মাস্টারবেশন আসক্তি থেকে মুক্তিলাভের জন্য সঠিক পরিকল্পনা করা জরুরী। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে আপনি ইরেকটাইল ডিসফাংশন থেকে মুক্তি পাবেন। বলে রাখা ভাল, ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হচ্ছে এমন একটি যৌন রোগ যার ফলে একজন পুরুষ যৌন ক্রিয়ায় অক্ষম হয়ে যায়। এই রোগ যার হয় সে খুব সহজেই জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে যায়। আপনি যদি প্রতিনিয়ত আপনার স্ত্রীর বদলে একটি স্ক্রিনে মানুষের সেক্স দেখে যৌন তৃপ্তি নিতে থাকেন এবং অতিরিক্ত মাস্টারবেট করেন তাহলে আপনিও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এর ফলে একসময় যখন আপনি পর্ন দেখা ও মাস্টারবেট করা বন্ধ করে নিজের স্ত্রীর সাথে যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হতে চাইবেন তখন আপনি আর সহজে সেক্সচুয়ালি উত্তেজিত হবেন না। অবশেষে অবস্থা এমনও হতে পারে যে আপনি পুরোপুরি যৌন ক্রিয়ায় অক্ষম হয়ে গেছেন এবং পাগলের মত ডাক্তারের কাছে ছুটোছুটি করছেন শুধুমাত্র আগের অবস্থা ফিরে পাবার আশায়। আপনি কি চান এমন একটি পথের পথিক হতে?

৫) আত্মমর্যাদা ফিরে পাবেন:

আমি আপনাকে একটি কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, পর্ন আসক্তি থেকে বের হবার সিদ্ধান্ত আপনার জীবন বদলে দিবে। এই একটি সিদ্ধান্ত আপনাকে নিজের প্রতি যত্নবান করে তুলবে এবং আত্মসম্মানবোধ অর্জনে সহায়তা করবে। আপনি জানেন, পর্ন আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়, অন্তরে হীনমন্যতা বাড়িয়ে দেয়, নিজের সকল সীমাবদ্ধতার কথা বার বার মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু আপনি চান এ আসক্তি থেকে মুক্তির মাধ্যমে অন্তরের সব ক্ষত মুছে ফেলতে এবং আত্ম উন্নয়নে সচেষ্ট হতে। আর তাই এই মুহূর্তে আপনি একটি কাজই করতে পারেন। তা হল- এ আসক্তি থেকে মুক্তির যাত্রা শুরু করা।

রেফারেন্স

1. Manning J., Senate Testimony 2004, referencing: Dedmon, J., ‘Is the Internet bad for your marriage? Online affairs, pornographic sites playing greater role in divorces,’ 2002, press release from The Dilenschneider Group, Inc.

2. Skinner, K.B., 2011, ‘Is porn really destroying 500,000 marriages annually?’ 

 

COMMENTS

WORDPRESS: 0