মুক্তির উদ্দেশ্য

মুক্তির উদ্দেশ্য

আপনি হয়ত অনেকদিন ধরে পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আপনার জ্ঞান অনুযায়ী সব উপায়ই অবলম্বন করেছেন। কিন্তু হতে পারে, আপনি যে কারণে আসক্তি থেকে মুক্তি চাচ্ছেন, সেটা আপনার কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না বা আপনার জীবনের তেমন কোনো উদ্দেশ্যই নেই। তাই দিন শেষে আসক্তি থেকে মুক্তির এই যাত্রায় আপনি খেই হারিয়ে ফেলছেন।

দেখুন, কারও যদি জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য না থাকে, সে এ বিষয়ে চিন্তা না করে, তাহলে তার জীবন তেমন একটা গোছানো হয় না। সে খায়, ঘুমায়, গেইম খেলে, আড্ডা দেয়, বাবা-মাকে দেখানোর জন্য একটু পড়াশুনা করে, এভাবেই তার দিন কেটে যায়। সে জানে না আজ থেকে পাঁচ বছর বা দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চায়। তাকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে? তার শেষ গন্তব্য কোথায়? আপনার অবস্থাও কি এমন? তাহলে এখনই সময় নিজের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে ভাবার।

আবার হতে পারে, আপনার জীবনে অনেক লক্ষ্য আছে। আপনি ভালো চাকরী করতে চান বা সফল ব্যবসায়ী হতে চান। একজন ভালো স্ত্রী চান। আদর্শ বাবা হতে চান। সমাজে প্রভাবশালী ব্যক্তি হতে চান। এসব লক্ষ্য সবার জীবনেই থাকতে পারে। এগুলোকে সামনে রেখে আপনি আসক্তির বিরুদ্ধে লড়ে যেতে পারেন। কিন্তু এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের পরও যদি আপনি আসক্ত থেকে যান, তখন আপনি কী চিন্তা করবেন? এজন্যই লক্ষ্যগুলোর পাশাপাশি আপনাকে একটি চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে যেতে হবে, যার কোনো শেষ নেই। যেটা চূড়ান্ত সফলতা। কী এই সফলতা? এই সফলতা হল, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া এবং জান্নাত লাভ করা।

এটাই একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। একজন মুসলিমকে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলার প্রয়োজন নেই। সে জানে জান্নাতে সে কী কী পাবে। তো এই জান্নাত লাভের জন্য কিন্তু ঈমান নিয়ে মরতে হবে। ঈমানই হচ্ছে জান্নাতের চাবি। তাই বলা যায়, এই দুনিয়ার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে ঈমান বা বিশ্বাস। অথচ আপনি হয়ত জানেন না, পর্নোগ্রাফি আসক্তি ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর।
সম্প্রতি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ এর একটি গবেষণায় অ্যামেরিকার তরুণদের ধর্মবিশ্বাসের ওপর পর্নোগ্রাফির নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে[১]। এ গবেষণায় দেখা যায়,
১) সৃষ্টিকর্তার সাথে তাদের দূরত্ব বাড়ছে
২) তারা আগের চেয়ে কম প্রার্থনা করে
৩) ধর্মীয় উপাসনালয়ে তাদের উপস্থিতি কমছে
৪) তারা ধর্মকে জীবনের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে
৫) ধর্মবিশ্বাস নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিচ্ছে

দীর্ঘসময় ধরে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত থাকা প্রতিটি ধার্মিক মুসলিমও অনুভব করে, তাদের ঈমান হ্রাস পাচ্ছে। তারা আল্লাহ্‌ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আচ্ছা, যদি এমন হয়, পর্নোগ্রাফির কারণে আপনি অবিশ্বাসী হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন। সারাজীবনের জন্য জাহান্নামে গেলেন। তাহলে আপনার চেয়ে বড় হতভাগা আর কে হবে। তাই পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্তি জন্য সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হওয়া উচিত—ঈমান রক্ষা করা। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে যান। আপনি সফল হবেন। ইনশা আল্লাহ্‌।

লিখেছেন: মিনহাজ মোহাম্মদ

রেফারেন্স:
[১] Samuel L Perry, George M Hayward, Seeing Is (Not) Believing: How Viewing Pornography Shapes the Religious Lives of Young Americans, <https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/28546649/>

COMMENTS

WORDPRESS: 0