হোম কোয়ারেন্টাইনে পর্নোগ্রাফি

হোম কোয়ারেন্টাইনে পর্নোগ্রাফি

দীর্ঘ সময় ধরে বাসায় বন্দি। আর ভালো লাগছে না। পরিবারের কারো সাথেও তেমন কথা হয় না। একঘেয়েমির সাথে যখন একাকীত্ব যুক্ত হয়; হাতে যদি থাকে ইন্টারনেটযুক্ত স্মার্টফোন আর অফুরন্ত সময়, তখন পর্নোগ্রাফিতে জড়িয়ে যাওয়ার আশংকা খুবই প্রবল। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়—কোয়ারেন্টাইন বা লকডাউনের সময় পর্ন দেখার হার বেড়ে যাচ্ছে।

যারা আগে থেকেই এতে আসক্ত, তাদের জন্য এ সময়টা খুবই চ্যালেঞ্জিং এটা বলাই বাহুল্য। আমরা অবশ্যই চাই না আমাদের প্রিয়জনেরা আমাদের সাথে সময় না কাটিয়ে পর্ন দেখুক। তাই আমরা তাদের যে উপদেশগুলো দিতে পারি-

১)  একা না থাকা: একাকীত্ব পর্নোগ্রাফির সবচেয়ে বড় ট্রিগার। তাই একা থাকা যাবে না।

২) স্মার্টফোন থেকে দূরত্ব বজায় রাখা: একা থাকতে না চাইলেও অনেক সময় একা থাকতে হতে পারে। তখন স্মার্টফোন থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাবা-মায়ের কাছে ফোন রেখে দেওয়া যেতে পারে। নেট ব্যবহার করা যায় না এমন ফোন ব্যবহার করতে হবে।

৩) পরিবারকে সময় দেওয়া: বাবা-মা, স্ত্রীকে কাজে সাহায্য করা। তাদের সাথে গল্প করা। ইউটিউবে ভালো ইসলামিক লেকচার একসাথে দেখতে পারেন।

৪) নিয়মিত নামায পড়া: মুসলিমদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া ফরজ একটা ইবাদত। আল্লাহ্‌ বলেন, “নিশ্চয় নামায মানুষকে অন্যায় এবং অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে (সূরা আনকাবুতঃ ৪৫)”। তবে নামাযে অবশ্যই মনোযোগ থাকতে হবে, তাহলেই এর উপকারিতা দৃশ্যমান হবে।

৫) স্বাস্থ্যকর রুটিন মানা: সবসময় স্মার্টফোন ছাড়া থাকা সম্ভব না-ও হতে পারে, তখন রুটিনমাফিক জীবনযাপনের গুরুত্ব আপনি অনুধাবন করবেন। আপনার সময় ফাঁকা না থাকলে, আর প্রতিটা সময় ভালো কাজে লাগালে, নিশ্চয়ই পর্ন দেখার ইচ্ছা জাগ্রত হবে না, ইনশা আল্লাহ্‌। মনে রাখবেন, বদভ্যাস ছাড়ার জন্য একে অন্য কোনো ভালো অভ্যাস দ্বারা প্রতিস্থাপিত করতে হয়।

৬) পর্নের ক্ষতিকর দিক নিয়ে ভাবুন: পর্ন দেখার পুরো পরিবেশ বিদ্যমান। খুব ইচ্ছা করছে দেখতে। এই অবস্থায়ও একটু ধীরস্থির হয়ে বসে পর্নোগ্রাফির ক্ষতিকর দিক নিয়ে চিন্তা করুন। আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চান। দেখবেন, আপনি সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।

৭) নিজেকে মিথ্যা আশ্বাস দেবেন না: একটু দেখলে সমস্যা নেই। আমি আসক্ত হব না। নিজেকে এমন মিথ্যা আশ্বাস দেবেন না। এটা নিজের জন্যই নিজের বানানো একটা ফাঁদ।

৮) দুই জীবনের জন্যই ক্ষতিকর: ইহকাল-পরকাল, বিয়ে আগে-পরে সব জীবনের জন্যই পর্নোগ্রাফি ক্ষতিকর। বিয়ের আগে পর্নে আসক্ত হলে বিয়ের পর ভুগতে হবে (সেক্সচুয়াল ডিসঅর্ডারে) আর বিয়ের পর হলে তো আরও বাজে অবস্থা।

৯) জীবনের পরিকল্পনা করা: কারও জীবনই চিরস্থায়ী নয়। কাজেই ভাবুন, আজ থেকে ২০ বছর বা ৩০ বছর পর আপনি কী করতে চান? কী করলে আপনি আল্লাহর কাছেও প্রিয় হবেন আর আপনার পরিচিতরাও আপনাকে সারা জীবন মনে রাখবে? সেই অনুযায়ী আগামী ১০ বছর, ৫ বছর, ১ বছর, ৩ মাস, ১ মাস, ১ সপ্তাহ থেকে ১ দিনের পরিকল্পনা সেট করুন। এটা অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদী একটা প্রসেস। তবে লকডাউনের চেয়ে এই পরিকল্পনা করার জন্য আর ভালো সময় পাওয়া যাবে কিনা আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহ্‌ চান তো, পর্ন থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়ার জন্য এই একটি টিপ অনুসরণ করাই যথেষ্ট।

১০) রোযা রাখুন: আমরা অনেকেই জানি রসূল ﷺ প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন। লকডাউনের এ সময়ে পরিশ্রম কম হচ্ছে। সারাদিনই বাসায় কাটছে। কাজেই এটা রোযা রাখার মোক্ষম সুযোগ। এর মাধ্যমে পর্ন দেখার চাহিদাও কমবে, আল্লাহর নৈকট্যও অর্জন করা যাবে।

লিখেছেন: মিনহাজ মোহাম্মদ

COMMENTS

WORDPRESS: 0