যে ৫০টি কারণে পর্ন ছাড়বেন

যে ৫০টি কারণে পর্ন ছাড়বেন

পর্ন বর্তমান সময়ের এক মহামারি সমস্যা। বেখেয়ালে এতে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত লাখো তরুণ। তবে আশার কথা হলো, পর্নের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক গবেষণা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা। তবুও অনেকেই পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তির যাত্রা শুরু করার প্রেরণা পায় না। তাদের জন্যই এ আর্টিকেল। এখানে আমরা পর্ন ছাড়ার ৫০টি কারণ নিয়ে আলোচনা করব। আসুন, শুরু করা যাক।

১) শারীরিক মিলন সম্পর্কে পর্ন কোনো আকর্ষণীয় উপায় জানায় না

পর্নের সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার হচ্ছে এটা মানুষকে সেক্সচুয়াল ফ্যান্টাসিতে ভোগায়। এসব পর্নে যা দেখানো হয় সেগুলো বাস্তবতার সম্পূর্ণ বিপরীত। বেশি পর্ন দেখার ফলে বাস্তব মিলন তখন মানুষের কাছে পর্নের মতো আকর্ষণীয় মনে হয় না। দেখা দেয় অপ্রাপ্তির বিষণ্ণতা, মনোমালিন্য ও সম্পর্কে টানাপোড়ন। পর্নে যা দেখানো হয় সবটুকুই অতিরঞ্জিত অভিনয় যার সাথে বাস্তবতার সামান্যতম সম্পর্ক নেই। 

২) এটা একটা নেশার মতো

বাইরে থেকে দেখলে কোকেন আর পর্ন এক জিনিস নয়। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল বলে, মাদকসেবনের ফলে মস্তিস্কে যে হরমোন নিঃসৃত হয়ে আনন্দের অনুভূতি দেয়, পর্ন দেখলেও ঐ একই হরমোন একইভাবে কাজ করে। মাদকসেবনের ফলে ডোপামিন, অক্সিটোসিন প্রভৃতি হরমোন নিঃসরিত হয়ে মস্তিস্কে একটি পথ (pathway) তৈরি করে, যে পথে নিয়মিত হরমোন নিঃসরণের প্রয়োজন দেখা দেয়, যা ব্যক্তিকে মাদকাসক্ত করে তোলে। তাই পর্নও একটি মাদক। এটা চোখের মাধ্যমে প্রবেশ করে। অন্যান্য ড্রাগ আসক্তির মতো এ আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়াও একসময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে আসক্তি থেকে মুক্তির এই যাত্রায় আপনি সঙ্গী হিসেবে আমাদের পাশে পাবেন, আর এ মুক্তির স্বাদ অত্যন্ত প্রশান্তিদায়ক। 

৩) এ অভ্যাস ও আসক্তি ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে

পর্ন আসক্তি বেশ ভয়ানক। নিজেকে টিকিয়ে রাখতে এ আসক্তি ক্রমেই ডালপালা ছড়াতে থাকে। ব্যক্তি আনন্দ পাবার জন্য আরও বেশি পর্ন দেখতে থাকে। প্রতিবার পর্ন দেখার সময় আগের বারের চেয়ে বেশি আনন্দ পেতে হার্ডকোর পর্ন দেখার প্রয়োজন পড়ে। ফলে দিন দিন তার চেতনা ও বোধশক্তি আরও ভোঁতা হতে থাকে। তাই আসক্তি আপনাকে শেষ করে ফেলার আগেই মুক্তির পথে ঘুরে দাঁড়ান। নিজেকে বাঁচান।

৪) জীবন ও মনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন

একপর্যায়ে পর্ন দর্শকরা এমনসব দৃশ্য দেখে আনন্দ পায় যা আগে তাদের কাছে জঘন্য লাগতো। কড়া ধাঁচের পর্নগুলো দেখতে দেখতে সে মারাত্মক ক্ষতিকর কাজগুলোকে দর্শক খুবই স্বাভাবিক ভাবতে শুরু করে। পর্ন মানুষের আদর্শকে ধ্বংস করে, বিবেককে নষ্ট করে আর সম্পর্কগুলোতে তিক্ততা বয়ে আনে। আপনার এ বদভ্যাসকে দূর করুন। নাহলে জীবনে আরও কষ্টদায়ক অবস্থায় পড়তে আপনি বাধ্য।

৫) বাস্তব জীবনে ফিরে আসুন

পর্নে মানুষকে যৌন পন্য হিসেবে দেখানো হয়। এর মাঝে বাস্তব অথবা রোমান্টিক কিছুই নেই। বরং এটা বাস্তবতা থেকে মানুষকে দূরে নিয়ে যায়। ফলে বাস্তব জীবনে তারা সুখী হতে পারে না। আপনার জীবন তখনই পূর্ণতায় পৌঁছবে যখন আপনি পর্ন ছেড়ে বাস্তব জীবনে ফিরে আসবেন।

৬) নিজের দেহের কদর করুন

পর্নে মেকাপ, সার্জারি, এডিটিং, অভিনয়- এসব ব্যবহার করে মানবদেহ ও যৌনতা নিয়ে অনেক ভুল ও অবাস্তব ধারণা মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। দর্শক নিজের অজান্তেই যা দেখছে তার সাথে নিজেকে তুলনা করতে থাকে। নিজের শরীর ও জীবন নিয়ে হতাশা, হীনমন্যতায় ভোগে। পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তি আপনার সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেবে, আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। 

৭) প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করুন

পর্নের প্রভাবে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে অবমূল্যায়ন করা হয়। কারণ, সেখানে তাদের এমন যৌন বস্তু হিসেবে দেখানো হয় যা অমানুষিক ও বাস্তবতাবিরোধী। ফলে প্রকৃত সুন্দরকে আর সুন্দর মনে হয় না। পর্ন এমন এক মিথ্যা কাল্পনিক জগতে মানুষকে নিয়ে যায় ফলে তার রুচি-কামনা-বাসনা কুৎসিত রূপ লাভ করে। সে এমন কিছু চায় যা তার স্ত্রীর মাঝে থাকে না। থাকার কথাও নয়। পর্ন ছেড়ে দেবার পর লোকে বলে যে তারা তাদের স্ত্রীর সৌন্দর্য উপলদ্ধি করতে পারেন। তাদেরকে আর ভোগের বস্তু হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করেন। প্রকৃতভাবে ভালবাসতে পারেন, সৌন্দর্যের মূল্য বোঝেন।

৮) যৌন অক্ষমতা প্রতিরোধ করুন

পর্ন যৌন অক্ষমতা ও যৌন অতৃপ্তির মূল কারণ। পর্ন দর্শকদের জরিপ নিয়ে জানা গিয়েছে, পর্ন দেখতে দেখতে একসময় ব্যক্তি তার স্বাভাবিক যৌনতাকেই ধ্বংস করে ফেলে । জানা গেছে, নিয়মিত পর্ন দেখার ফলে মস্তিষ্কে এমন পরিবর্তন আসে যার ফলে বাস্তবে সহবাস করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। পর্ন আসক্তি একজন পুরুষের উত্তেজিত হবার ক্ষমতাকেই নষ্ট করে দেয়। কিন্তু এটা তারা টের পায় অনেক দেরিতে। এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো পর্ন ও মাস্টারবেশনের মতো বাজে অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়া। স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসা।

৯) যৌন পাচার বন্ধ করুন

মানুষ যত পর্ন দেখবে পর্ন ইন্ডাস্ট্রি তাদের চাহিদা পূরণের জন্য তত বেশি মানব পাচার চালিয়ে যাবে। যৌন পাচারের শিকার অগণিত নারীকে পর্নে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এমনকি সরকারিভাবে বৈধতাপ্রাপ্ত আমেরিকান এডাল্ট ইন্ডাস্ট্রিতেও পর্ন তারকারা হরহামেশাই জুলুম ও জোরপূর্বক মাদকদ্রব্য গ্রহণের শিকার হয়। ক্যামেরার পেছনে থাকা অন্ধকার তিক্ত সত্যকে জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। পর্নকে ‘না’ বলে আপনি এসব শোষণ-নিপীড়ন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারবেন। জালিমদের কালো হাত থেকে কাউকে হয়ত বাঁচাতে পারবেন।

১০) পর্ন নারী নির্যাতনে উৎসাহিত করে

অনেক পারফর্মার বলেছে, পর্নে উগ্র ও অনিরাপদ যৌনকর্ম দেখানোর জন্য তাদেরকে ধর্ষণ করা হয়। প্রতিনিয়ত নির্যাতন চলে। জোরপূর্বক মাদকও দেওয়া হয়। পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ক্যামেরার পেছনের অন্ধকার জগত খুবই ভয়াবহ। পর্ন এসব নিপীড়নকে স্বাভাবিক প্রমাণ করতে চায়, কিন্তু সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ এটা মেনে নিতে পারেন না। পর্ন দেখা মানে হচ্ছে এমন একটা গোষ্ঠীকে সাহায্য করা যারা তাদের অভিনেত্রী ও দর্শক সবাইকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

১১) পর্ন আপনার আচরণকে উগ্র করে তোলে আপনার অজান্তে

সব পর্ন একরকম না হলেও বেশিরভাগ পর্নেই নারীদের মৌখিক ও শারীরিকভাবে অপমান করা হয়, গালাগালি করা হয়। আর দর্শক এর দ্বারা অবশ্যই প্রভাবিত হয়। লাঞ্ছিত না করা হলেও পর্নগুলোতে পুরুষকে দেখানো হয় শক্তিশালী রুপে, শিকারি হিসেবে- আর নারীকে দেখানো হয় দুর্বল, ভোগের বস্তু, শিকার হিসেবে। কাউকে লাঞ্ছিত বা আক্রমণ করা হলে সেও পাল্টা আক্রমণ করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু ৯৫% পর্নে নারীরা আক্রমণের বিরোধিতা করা তো দূরে থাক, উল্টো ভুক্তভোগী নারীকে এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় অথবা এসব উপভোগ করে দেখানো হয়। ফলে দর্শকদের মনে এ বিশ্বাস জন্মে যে, জবরদস্তি বা আক্রমণাত্মক আচরণ মেয়েরা পছন্দ করে, ছেলেরা চাইলেই মেয়েদের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে। ফলস্বরুপ এসব দর্শকরা নিজেদের স্ত্রীদের কষ্ট দিয়ে থাকে। আর এভাবে এদের সম্পর্কগুলোও বিষাদময় হয়ে উঠে। সমাজে বাড়তে থাকে ধর্ষণ ও খুনের পরিমাণ।

১২) সৃজনশীলতা বাড়াতে পর্ন ত্যাগ করুন

সৃজনশীল হবার জন্য আপনাকে জীবনের গভীরে ঢুকতে হবে। জীবনের প্রতিটি দিককে দেখে তার মর্ম উপলদ্ধি করতে হবে। কিন্তু পর্ন এমন সব সস্তা আর নোংরা ঘেরা কল্পনার জগতে আপনাকে বন্দি করে ফেলে যা আপনার ভিতরের আবেগ ও প্রেরণাকে নষ্ট করে দেয়। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনি আরও সুক্ষ্ম চিন্তার অধিকারী ও দূরদর্শী হতে পারবেন। ঠাণ্ডা মাথার মানুষে পরিণত হবেন।

১৩) আরও সৎ জীবনে অভ্যস্ত হোন

সব পর্ন আসক্তরা তাদের আসক্তির ব্যাপারে মিথ্যা বলে না। তবে তারা সত্য বলতে লজ্জা পায়। সত্যকে লুকিয়ে রাখা আবশ্যক মনে করে। তারা স্বীকার করুক বা না করুক এটা ভালোভাবেই তারা জানে তাদের সঙ্গী পর্ন আসক্তিকে খারাপ চোখে দেখে। দীর্ঘদিন ধরে একটা মিথ্যার সাথে জীবন কাটানোর ফলে এটাকে তারা একসময় স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেয়। আপনি যত বেশি মিথ্যার আশ্রয় নিবেন, সত্য স্বীকার করা তত বেশি কঠিন হয়ে যাবে। আপনার সমস্যার কথা খুলে বলুন, আশা করা যায় আপনি আগের থেকে অনেক হালকা অনুভব করবেন। 

১৪) সময় বাঁচান, কাজে লাগান

আপনি হয়ত খেয়াল করেছেন যে পর্ন আপনার অজস্র সময় নষ্ট করেছে। পর্ন দর্শক প্রতিদিন কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা সময় এসব ক্ষতিকর দৃশ্য দেখে নষ্ট করে। যারা ঘন ঘন পর্ন দেখে তারা জানে সময়ের সাথে সাথে তারা আরও কড়া ধাঁচের পর্ন আরও বেশি সময় ধরে দেখছে। ভেবে দেখুন, যদি আপনি দিনে মাত্র ১০ মিনিট সময় পর্ন দেখেন, তাহলে বছরে ৬০ ঘণ্টা সময় আপনি পর্ন দেখে নষ্ট করলেন। এই লম্বা সময়টা আপনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা ভালো কাজে লাগাতে পারতেন। সময় অনেক মূল্যবান। সময়কে কাজে লাগান। ভালো কাজ করুন। সময়কে এমন স্মৃতি দিয়ে ভরিয়ে তুলুন যেগুলো দীর্ঘস্থায়ী, এমন দৃশ্য দিয়ে নয় যেগুলো এক ক্লিকেই হারিয়ে যায়। 

১৫) মনের মানুষকে খুঁজে বের করুন

পর্নে যেভাবে মিলন দেখানো হয় তা ডাহা মিথ্যা। পর্ন দর্শক এ মিথ্যা আনন্দের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে ওঠে আর সত্যিকারের সুখকে পেছনে ফেলে দেয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পুরুষদের বিয়ের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। কারণ, তারা ভাবছে পর্ন তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করছে। মিথ্যার এ ফাঁদ থেকে নিজেকে বাঁচান, আর আপনার মনের মানুষটিকে খুঁজে বের করুন। (বিয়ে করুন।) ভালোবাসা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

১৬) একজন উত্তম জীবনসঙ্গী হয়ে উঠুন

পর্ন শুধু আপনাকে নয়, আপনার জীবন সঙ্গীকেও প্রভাবিত করে। পর্ন আসক্তরা যেমন অনেক সমস্যায় ভোগে একইসাথে তাদের সঙ্গীও একা একা অনেক কষ্টকর অনুভূতির মধ্য দিয়ে যায়। যখন একজন স্ত্রী জানতে পারে তার স্বামী পর্ন আসক্ত; নিজের প্রয়োজন পূরণে সে তার স্ত্রীর কাছে না গিয়ে পর্নের দ্বারস্থ হয়, তখন ঐ নারী নিজেকে প্রতারিত ও অবহেলিত মনে করে। আপনি যদি আপনার ও আপনার স্ত্রীর মাঝে পর্নকে জায়গা না দেন তবে আপনাদের মাঝে মানসিক ও শারীরিক উভয়দিক থেকেই খুব মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠবে।

১৭) উত্তম বাবা-মা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলুন

পর্নের ক্ষতি শুধু স্বামী-স্ত্রীর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না। পর্ন পরিবারের সদস্যদের বিচ্ছিন্ন করে, এমনকি পরিবার ভেঙ্গে যায়। তাছাড়া বর্তমানে শিশু-কিশোররা খুব অল্প বয়সে হার্ডকোর পর্ন দেখছে। এসব থেকে তারা যৌন শিক্ষা লাভ করছে, যা তাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। তারাও ভবিষ্যতে তাদের দাম্পত্য জীবনে এজন্য ভুগবে। আপনার সন্তানদের সাথে স্নেহ-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলুন, তাদের খেয়াল রাখুন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পর্নমুক্ত জীবন উপহার দিন।

১৮) একজন উত্তম বন্ধুতে পরিণত হোন

আপনার পর্ন আসক্তি আপনাকে বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। সামাজিকতা থেকে অনেক দূরে চলে যাবেন আপনি। একাকিত্বসহ আরও নানান সমস্যা আপনাকে ঘিরে ধরবে। পর্নকে জীবন থেকে দূরে নিক্ষেপ করেই কেবল আপনি এর দাসত্ব এবং এ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাবেন।

১৯) মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখুন

পর্ন আসক্তি আপনার অনেক মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে। এছাড়া আপনাকে জীবনের আনন্দগুলো উপভোগ করতে দেয় না- যেমন- গল্পগুজব করা, কর্মঠ হওয়া ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ঘন ঘন পর্ন দেখার ফলে উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার মতো বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দেয় পর্ন ছেড়ে দেওয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ, এজন্য আপনাকে অবশ্যই কষ্ট করতে হবে। পরিশেষে আপনি একটি বড় বিজয় লাভ করবেন।

২০) নিজেকে আবার নিজের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনুন

নিয়মিত পর্ন দেখে এমন প্রতি পাঁচজনের একজন অনুভব করে, তারা তাদের কামনা-বাসনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এতে করে বাস্তব জীবনে তারা তাদের স্ত্রীদের দ্বারা উত্তেজিত হতে পারে না। ফলে মন ভুলে রাখতে তারা আরও বেশি পর্ন দেখে। তাদের জীবনে আরও জটিলতা বাড়তে থাকে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনি কামনা-বাসনার গোলামী থেকে মুক্তি লাভ করবেন। আপনার যৌন চাহিদার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে, আর আপনার স্ত্রীর আরও কাছে যেতে পারবেন।

২১) কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসুন

পর্নের দৃশ্য ধারণের পূর্বে রিহার্সাল করা হয়। এরপর ধারণ করা দৃশ্যগুলো অনেক অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়। বিশেষ করে পারফর্মারদের দেহকে অত্যধিক সুন্দর হিসেবে দেখানো হয়। আর এসব দেখার ফলে দর্শক ও তার সঙ্গীর দৈহিক চাহিদা প্রভাবিত হয়। তাদের যৌন জীবন পশুর মত হয়ে ওঠে। পর্ন ছেড়ে দেওয়ার পরে আপনার ও আপনার স্ত্রীর মাঝে আরও মধুর সম্পর্ক তৈরি হবে, আপনাদের সত্যিকার অর্থে যেটা প্রয়োজন আপনারা সেটা চাইবেন, পর্নে যেটা দেখানো হবে সেসব নয়। আপনাদের মেলামেশাকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে তুলুন, পর্নের মতো অবাস্তব- জন্তু-জানোয়ার সদৃশ আচরণকে অনুসরণ নয়, পরিত্যাগ করুন।

২২) যৌনশক্তি বৃদ্ধি করুন

পর্ন দেখার সময় অনেকেই হস্তমৈথুন করে থাকে। কেউ এতে এতই আসক্ত হয়ে পড়ে যে দিনে কয়েকবার তারা হস্তমৈথুন করে। যে এরূপ করে সে তার দাম্পত্য জীবনে বিছানায় মেলামাশায় আনন্দ পায় না, অন্যভাবে বললে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। আপনি নিশ্চিতভাবেই হস্তমৈথুন করার ফলে অনেক দুর্বলতা অনুভব করবেন, আপনার যৌন আকাঙ্ক্ষায়ও ঘাটতি দেখা দেবে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনার এই শক্তি আপনি ধরে রাখতে পারবেন।

২৩) সামগ্রিক দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি করুন

পর্ন আপনার সময় ও স্বাভাবিক যৌনতাকে নষ্ট করে এটা তো স্পষ্টভাবেই বুঝা যায়। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন তা আপনাকে শারীরিকভাবে কতটা দুর্বল করে? দৈনন্দিন জীবনে যেরকম শারীরিক ও মানসিক শক্তির প্রয়োজন, পর্ন আপনার থেকে তা পুরোপুরি শুষে নিবে। এভাবে পর্ন আপনার কর্মক্ষমতা, আর জীবনীশক্তি একদম শেষ করে দিবে। পর্ন ছাড়ুন, আর আপনার নিজের ও অন্যদের উপকার হয় এমন কাজে নিয়োজিত হোন।

২৪) ফোকাস পুনর্জন করুন

কেউ কেউ দৈনন্দিন জীবনের দায়দায়িত্বে নিমজ্জিত হবার পর তা থেকে নিষ্কৃতি পাবার মাধ্যম হিসেবে পর্ন দেখে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনি আরও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন এবং নিয়মমাফিক জীবনযাপন করতে পারবেন। এই বিপথ হতে বের হতে পারলে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কাজে ঠিকভাবে ফোকাস করতে পারবেন।

২৫) আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন

পর্ন থেকে মুক্তি পাবার জন্য আত্মবিশ্বাস একটি বড় হাতিয়ার। পর্ন আসক্তদের অনেকেই মূলত ভঙ্গুর হৃদয়ের হয়ে থাকে। তারা ভালোবাসা এবং আনন্দকে ঠিকমত উপলদ্ধি করতে পারেনা। পর্ন ছাড়তে পারার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসের অভাব সহ মনের আরও কিছু নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেক মানুষ পর্ন ছাড়তে পারে না। আর ক্রমাগত পর্ন দেখার ফলে মনের ওপর আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে যা এসব নেতিবাচক দিককে আরও বাড়িয়ে তোলে। পর্ন ছাড়তে পারলে আপনার জীবনে যে সুখের অনুভূতি হবে তা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার আত্মবিশ্বাস আরও বৃদ্ধি করবে।

২৬) আপনার সংসারকে রক্ষা করুন

বর্তমান বিশ্বে বিবাহ-বিচ্ছেদের একটি প্রধান কারণ হলো পর্ন আসক্তি। আপনি হয়ত বিয়ে করেছেন অথবা করবেন। এটা নিশ্চিত যে পর্ন আপনার বৈবাহিক জীবনকে বিষিয়ে তুলবে। পর্নের উপস্থিতিতে একটি সোনার সংসার, একটি মধুর সম্পর্ক ভেঙ্গে যেতে পারে। এরকম গুরুতর সমস্যার একটিই সমাধান- পর্ন চিরতরে ছেড়ে দেওয়া।

২৭) অর্থ বাঁচান

পর্ন বৈশ্বিকভাবে ৯৭ বিলিয়ন ডলার অর্থমূল্যের একটি ইন্ডাস্ট্রি যার ১২ বিলিয়ন ডলার আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আপনি পর্নের জন্য কত টাকা খরচ করেছেন? যদি খরচ নাও করে থাকেন, তাহলে এভাবে চিন্তা করুন- আপনি যে সময়গুলো পর্ন দেখে নষ্ট করেছেন সেগুলো দুইভাবে কাজে লাগাতে পারতেন। যেমন, ১) অর্থ উপার্জনে অথবা ২) কর্মক্ষেত্রে আরও ভালো করে সেখানে এতদিনে আরও বেশি উপার্জন করে। কথায় বলে, ‘Time is money’, সময়ই অর্থ। পর্ন দেখে সেই মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে আপনি নিজেকে কতটা নিষ্কর্মা হিসেবে গড়ে তুলছেন সেকথা ভেবে দেখেছেন?

২৮) স্বাভাবিক যৌনতা ধরে রাখুন

পর্ন যৌনমিলনের মধুরতা, পরস্পরের অন্তরঙ্গতাকে ধ্বংস করে দেয়। এটা ভালবাসতে শিখায় না বরং শুধু নিজের লালসা পূরণ করতে শিখায়। যখন আপনি পর্নে দেখানো সেসব দৃশ্য দিয়ে মন-মগজকে ভরে ফেলেন, তখন তা আপনার থেকে স্বাভাবিকভাবে যৌন উত্তেজনা পাবার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়, আপনার যৌনতাকেই বিকৃত করে তোলে। পর্ন ছাড়ার ফলে আপনার মস্তিষ্ক আবার স্বাভাবিকভাবে কাজ করবে এবং আপনার যৌন জীবনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

২৯) আগ্রহগুলোকে রক্ষা করুন

যে জিনিসগুলো আপনাকে আগে আনন্দ দিত পর্ন দেখতে শুরু করার পর সেগুলো আর আগের মতো ভালো লাগবে না। পর্ন আপনার ব্রেইনকে যতটা নাড়া দেয় বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া বা খেলাধুলা করা- এই কাজগুলো ততটা নাড়া দেয় না। পর্ন আপনার মাঝে যে চরম উত্তেজনা তৈরি করবে, তার ফলে আপানার অন্যকিছু আর ভালো লাগবে না। কিন্তু চিন্তার কোনো কারণ নেই। যত দ্রুত আপনি পর্ন ছাড়তে পারবেন তত দ্রুত আপনি আপনার ভালোলাগার কাজগুলোতে মনোনিবেশ করতে সক্ষম হবেন।

৩০) যৌন আসক্তি প্রতিরোধ করুন

আসক্তি সে যা কিছুরই হোক কখনোই ভালো কিছু নয়। পর্ন আপনার মাঝে প্রচণ্ড যৌনক্ষুধা জাগিয়ে তুলবে যা আপনাকে কখনও তৃপ্তি দিবে না। এই প্রক্রিয়ায় পর্ন দর্শক এক ঘোরের মাঝে আটকে যায় যা তাকে মানবসমাজে স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপন করতে দেয় না। বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের ব্যাপারে সে খুবই বিকৃত চিন্তাভাবনা লালন করতে থাকে। এমনকি সে এতটাই নিচে নেমে যেতে পারে যে সে পতিতালয়ে গমন করতে পারে। জীবনে সামনে এগিয়ে যেতে এবং পদস্খলন হতে নিজেকে বাঁচাতে পর্নকে আপনার জীবন থেকে অবশ্যই দূর করতে হবে।

৩১) স্ক্রিনের সাথে আবদ্ধ হবেন না

অক্সিটোসিনকে বলা হয় ভালোবাসার হরমোন। কারণ, এই হরমোন দুজন মানুষের মাঝে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। যৌন মিলনের সময়ও এই হরমোন নিঃসৃত হয়। আবার পর্ন দেখার সময়ও এই হরমোন নিঃসৃত হয় যা আপনার মাঝে পর্নের প্রতি টান তৈরি করে। পর্ন থেকে দূরে থাকুন। প্রকৃত ভালোবাসাকে কাছে টানুন, গ্রহন করুন। নকলকে বর্জন করুন।

৩২) উদ্বেগ প্রতিরোধ করুন

আগেই বলা হয়েছে, পর্ন দেখার কারণে মানসিক উদ্বেগ-দুশ্চিন্তার মতো সমস্যা হতে পারে। যখন আসক্তরা পর্নের কথা চিন্তা না করে থাকতে পারে না তখন তা গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি করে। বলার অপেক্ষা রাখেনা এই উদ্বেগ বেডরুমেও প্রভাব বিস্তার করে। ফলে যৌন অক্ষমতার (erectile dysfunction) মতো সমস্যা দেখা দেয়। মানসিক উদ্বেগ খুবই পীড়াদায়ক। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততায় এমনিতেই কত মানসিক চাপে ভুগতে হয়। কি দরকার এর সাথে আরও কিছু যোগ করার?

৩৩) বিষণ্ণতা প্রতিরোধ করুন

আমরা জানি পর্ন দেখার ফলে বিষণ্ণতা বোধ হয়, আর মনের অবস্থা ক্রমেই আরও খারাপ হতে থাকে। অতি ক্ষণস্থায়ী একটি বিনোদন কারও আকাশে কালো অন্ধকার ডেকে আনে। পর্ন আপনার জীবনে শুধুই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জীবনকে স্বাধীন আর আনন্দময় করে তোলার উপায় হল পর্ন ছেড়ে দেয়া।

৩৪) স্বাধীন জীবন লাভ করুন

খারাপ কাজের কিন্তু মনের ওপর একটা খারাপ প্রভাব পড়ে। পর্ন দেখার ফলে আপনার মনে লজ্জার অনুভূতি হয়, নিজের কাছে খারাপ লাগে। পর্নের দৃশ্যগুলো খুবই নোংরা লাগার পরও আসক্ত দর্শক তা দেখা ছাড়তে পারে না। এই কষ্টকর অনুভূতি আরও পর্ন দেখতে প্ররোচিত করে। এভাবে একজন ব্যাক্তিকে পর্ন তার দাসত্ব করায় আর তাকে গ্রাস করতে থাকে। আপনি অবশ্যই নিজেকে মুক্ত, স্বাধীন অনুভব করবেন যখন দাসত্বের এই শিকল আপনি ভাঙতে পারবেন। 

৩৫) কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করুন

এরচেয়ে বড় প্রেরণাদানকারী কথা আর কি হতে পারে বলুন। আপনি কি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে চান না? জীবনে সফলতা চান না? বড় কিছু করার স্বপ্ন কি আপনি দেখেন না? রেড্ডিট কমিউনিটি ‘নো ফ্যাপ’ নামে একটি জরিপ চালিয়ে জানতে পারে যারা পর্ন ছাড়তে পেরেছিলেন তাদের শতকরা ৬৭ জনের শারীরিক শক্তি এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিলো। আর কিসের জন্য অপেক্ষা করছেন? আজই এই পরীক্ষায় অবতরণ করুন।

৩৬) কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করুন

পর্ন যেমন মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে তেমনি একইসাথে তা দর্শককে বিষণ্ণতা এবং দুশ্চিন্তায় নিপতিত করে। এরকম কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়ে তারা তাদের কাজকর্ম মোটেই ঠিকমত করতে পারে না। এমন ঘটনাও ঘটেছে যেখানে কাজের সময় পর্ন দেখতে গিয়ে ধরা পড়ার পর তাদের চাকরি হারানোর অবস্থা হয়েছে। পর্নের মতো সর্বনাশা বস্তুকে কখনই আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে ধ্বংস করতে দিবেন না।

৩৭) যৌনরোগ(STD) প্রতিরোধ করুন

বারংবার গবেষণায় জানতে পারা গেছে, বেশি পর্ন দেখা অনেকে যিনা-ব্যাভিচারে জড়িয়ে পড়ে। এক বা একাধিক মানুষের সাথে তারা যৌনসংগম করে। অনেক ভয়ানক ও ক্ষতিকর যৌন কর্মে লিপ্ত হয় যা তাদের মারাত্মক সব যৌনরোগে আক্রান্ত করে।

৩৮) শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান

পর্ন ছাড়ার মাধ্যমে আপনি একটি শোষণমূলক ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন। নিজেকে এবং পুরো সমাজকে বদলানোর দায়িত্ব কাধে তুলে নিচ্ছেন। ব্যাপারটা সত্যিই অসাধারণ। তাই বদলে যান, বদলে দিন।

৩৯) পৃথিবীকে আরও উত্তম করে তুলুন

পর্ন সাইটগুলোর লিংকে একেকটি ক্লিক এই ইন্ড্রাস্টির লোভী গোষ্ঠীকে প্রতিনিয়ত লাভবান করছে। এসব সাইটে যাওয়ার ফলে পর্নের চাহিদাকে ক্রমেই বাড়িছে। ফলে পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি সমাজে আরও বিস্তার লাভ করছে। এই অন্ধকারকে ছড়াতে দেওয়া যায় না। একে রুখতে হবে। কারণ, এই ইন্ডাস্ট্রি মানুষের জীবন নষ্ট করে এবং যৌন শোষণ-নিপীড়নকে সমর্থন করে। তাদের ক্ষতি আপনাকে সেভাবে স্পর্শ না করলেও আপনার আশেপাশের অনেককেই তা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিশেষ করে এই ইন্ডাস্ট্রির অসংখ্য জিম্মি যাদেরকে এসব কাজে বাধ্য করা হয় তাদের জীবনগুলো তছনছ হয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ নিন। পৃথিবীকে রক্ষা করুন।

৪০) একাকীত্ব কাটিয়ে তুলুন

পর্ন একজন ব্যক্তির একাকী সময়ে তাকে খানিকটা সঙ্গ দিয়ে তার একাকীত্বকে আরও শোচনীয় অবস্থায় নিয়ে যায়। পর্ন একজন দর্শককে নগদ পরিতৃপ্তি, অসীম উত্তেজনা এবং খুব সহজে যৌন প্রয়োজন পূরণের লোভ দেখায়। কিন্তু পরিশেষে তাকে প্রতারিত করে। তিনটির কোনটিই তাকে দেয় না। বরং, তার থেকে কেড়ে নেয়। তাকে নিঃস্ব করে ছাড়ে। 

৪১) সহিংসতা স্বাভাবিক হওয়াকে বাধা দিন

সহিংসতা কখনোই স্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু ১০-১১ বছরের কোমলমতি শিশুরাও এখন হার্ডকোর পর্নের নিকৃষ্ট দৃশ্য দেখে এসব কাজ স্বাভাবিক ভাবছে। ভেবে দেখুন তো এটা আমাদের মূল্যবোধকে কোথায় নামিয়ে দিচ্ছে। পর্ন আমাদের সম্পর্কগুলো ভঙ্গুর করে তুলছে। সকল ধরণের পর্ন ছাড়তে পারলে সহিংস ও আক্রমণাত্মক আচরণকে ভালোবাসা হিসেবে স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া বন্ধ হবে। আমাদের সমাজ এর ক্ষতির হাতথেকে রক্ষা পাবে।

৪২) মানুষকে সম্মান দিতে শিখুন

কখনও কি এমন হয়েছে যে কেউ ঘুম থেকে উঠে বলল, “আজকে আমি বের হয়ে সবার সাথে সব সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলব। নিজেকে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলব। আর সবাইকে অবহেলা করব, কষ্ট দিব?” এরকম কেউ করে না। কিন্তু কিছু জরিপে উঠে এসেছে পর্ন দেখার ফলে ঠিক এরকমটাই হতে পারে। পর্ন ছাড়ুন, আপনার প্রিয়জনদের পাশে থাকুন। এভাবে আপনি নিজেকে এবং অন্যদের সম্মান রক্ষা করবেন।

৪৩) বস্তুবাদের প্রসারকে বাধা দিন

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ কেন্ট-এর একটি জরিপে দেখা গেছে মেয়েদেরকে ভোগের বস্তু হিসেবে দেখা আর তাদের প্রতি আক্রমণাত্মক বা সহিংস হয়ে ওঠা পরস্পর সরাসরি সম্পর্কিত। আমরা পর্নের বিরুদ্ধে এজন্যই লড়াই করি। আমরা বিশ্বাস করি, মানুষ শুধু একটা দেহ নয়, যা চাইলেই যেভাবে খুশি ব্যবহার করা যায়, আবার চাইলেই ফেলে দেয়া যায়। পর্ন ক্ষতিকর তা গবেষণায় প্রমাণিত। কিছু মানুষ পর্নকে যতই স্বাভাবিক এবং ভালো প্রমাণ করতে চেষ্টা করুক না কেন, তাদেরকে ভুল প্রমাণ করার জন্য অনেক প্রমাণ আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন।

৪৪) মিথ্যা যৌনতাকে ছুড়ে ফেলুন

এমন জায়গা থেকে যৌনতা শিখতে যাবেন না যেখানে যৌন তৃপ্তির মিথ্যা অভিনয় দেখিয়ে টাকা কামানো হয়। আর কিছু নাহয় নাই বললাম।

৪৫) যুবসমাজকে ও শিশু-কিশোরদের রক্ষা করুন

পর্নে শেখায়, বেশি বয়সী কমবয়সীর ওপর এবং শক্তিবান দুর্বলের ওপর ক্ষমতাবান। পর্নকে দূর করতে পারলে শিশুকিশোরদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে অনেকটা রক্ষা করা যাবে। এটা নিশ্চয়ই অনেক বড় ব্যাপার। পর্ন ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে শিশু পর্ন, কিশোর পর্ন এর চাহিদাও কমিয়ে যাচ্ছে। এটা পর্নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভূমিকা রাখবে।

৪৬) বাস্তব মানবদেহ নিখুঁত নয়, তবে অতুলনীয় সুন্দর

পর্নে ফটোশপ বা এ জাতীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করে তাতে অভিনয় করা মানুষদের দেহগুলোকে চোখ ধাঁধানো, আকর্ষণীয় এবং নিখুঁত রূপে দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয় না। একজন স্বাভাবিক মানুষের দেহ এমনিই সুন্দর, অতুলনীয়। পর্ন মুক্ত একটি পৃথিবী হলো এমন যেখানে কৃত্রিম সৌন্দর্য নেই, যেখানে মানুষকে কদর করা হয়, সম্মান করা হয়, তুলনা নয়। আমরা এমনই একটি পৃথিবীতে থাকেতে চাই। আপনিও কি তাই চান না?

৪৭) অসুস্থ সম্পর্ককে না বলুন

স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গতা অনেক বেশি কিছু দেয়। স্বামী-স্ত্রী মেলেমেশা করে যে আনন্দ পায় সেটা কখনই পর্ন দেখে পাওয়া সম্ভব নয়। বরং পর্ন একজন মানুষকে অপর একজনের প্রতি আক্রমণাত্মক, উগ্র করে তোলে। এই উগ্রতা শুধু বিছানায় নয়- মনে ও সমগ্র জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। সহবাস পরস্পরের অধিকার পূরণের জন্য করা হয়, শুধু নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য নয়। পর্ন ভালোবাসা শেখায় না, শুধু উগ্রতা আর অসভ্যতা শেখায়।

৪৮) সম্পর্ক থেকে বাস্তবতা বিবর্জিত চাহিদা ত্যাগ করুন

একটা সম্পর্ক গড়ে তোলা পরিশ্রমের কাজ। সম্পর্কগুলো কখনোই নিখুঁত হয় না। একইভাবে শারীরিক সম্পর্কও প্রত্যেকবার নিখুঁত ও সহজ হবে না। ভালোবাসা একটা মিশ্র অনুভূতি- আর এখানেই এর সৌন্দর্য- এটা বাস্তব ব্যাপার, কোনো রূপালী পর্দার মিথ্যা অভিনয় নয়। পর্নের সাথে বাস্তব সম্পর্কগুলোর পার্থক্যটা এখানেই। পর্ন এর অভিনেতার পারফর্ম্যান্সের বিচারে মাপা হয়, এখানে মানসিক যোগাযোগের কোনো ধার ধারা হয় না। বাস্তব ভালোবাসার সোন্দর্যই হলো- এর বাস্তবতা- বাস্তব মানসিক-শারীরিক-পারিবারিক অনুভূতির এক মিশ্র আনন্দ।

৪৯) সত্য ভালোবাসায় বিশ্বাস করুন

পর্ন যখন একজন মানুষের মন-মস্তিষ্ককে গ্রাস করে ফেলে, তখন সে পর্নে যা দেখে সেটাই তার কাছে সবকিছু মনে হয়। সে তখন ভালোবাসা বলতে কিছুতে বিশ্বাস করে না। তাদের কাছে যৌনতাই সবকিছু মনে হয়। সে মন থেকে কাউকে ভালবাসতে পারে না। পর্নের এসব মিথ্যাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেবার জন্য আপনাকে আজই পর্ন ছাড়তে হবে।

৫০) সত্য ভালোবাসাকে বেছে নিন

যেসব কারণে আপনার পর্ন ছাড়া উচিত এটি সেগুলোর মাঝে খুব গুরুত্বপূর্ণ। পর্ন আপনার ও আপনার জীবনসঙ্গীর মাঝে এসে দাড়িয়েছে। আপনাদের পরস্পরে প্রতি টান, ভালোবাসাকে এটা প্রভাবিত করে। পর্ন আপনাদের বিছানার অন্তরঙ্গতা একদম বিকৃত করে তুলবে। আমাদের কাছে এরকম অনেকের অভিজ্ঞতা এসেছে যেখানে পর্নের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে টানাপড়ন হয়েছে এবং তাদের মাঝ থেকে একসময় সুখ, আনন্দ- এই জিনিসগুলো হারিয়ে গিয়েছে। এভাবে অনেক সম্পর্ক ভেঙ্গেও যাচ্ছে। আমরা সবাই ভালোবাসা চাই। আমাদের জীবনে ভালোবাসা প্রয়োজন। ভালোবাসা জীবনকে খুবই উপভোগ্য করে তোলে, আনন্দময় করে তোলে। অন্তত আপনার সংসারটি রক্ষা করার জন্য পর্ন ছাড়ুন। পর্ন ভালোবাসার মৃত্যু ঘটায়। সেটা নিশ্চয় হতে দেওয়া যায় না। তাই আপনার জীবনে ভালোবাসাকে স্থান দিন, পর্নকে নয়। 

অনুবাদ: #teamFAD

COMMENTS

WORDPRESS: 0