পর্ন যেভাবে বিষণ্ণ, একাকী আর বিচ্ছিন্ন করে তোলে

পর্ন যেভাবে বিষণ্ণ, একাকী আর বিচ্ছিন্ন করে তোলে

আপনার মনে হয়ত প্রশ্ন আসে, পর্ন কি আসলেই এতটা ক্ষতিকর? বাস্তবতা হচ্ছে, পর্ন আসলেই অনেক ক্ষতিকর। পর্ন মানুষকে আসক্ত করে ফেলে। এর পরিণতি স্বরূপ মানসিক বিকৃতি, সম্পর্কচ্ছেদ, নারী অথবা পুরুষদের প্রতি বিদ্বেষসহ নানান ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
ইন্টারনেটের বদৌলতে পর্ন সবার জন্য সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। বর্তমানে শতকরা ৬৮ জন পুরুষ এবং শতকরা ১৮ জন নারী সপ্তাহে অন্তত একবার পর্ন দেখে। আর এই পরিমাণটা ক্রমেই বাড়ছে। পর্নের মহামারি এভাবে বৃদ্ধি পাবার কারণ শুধু এর সহজলভ্যতা নয়; বরং এর ক্ষতি সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাবও বটে।

আমরা জানি পর্ন আসক্তির ফলে একজন মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। আরও গবেষণায় উঠে এসেছে যে, পর্ন আমাদের মন-মস্তিস্ক, শরীর এবং সম্পর্কগুলোর, এককথায় পুরো জীবনের ক্ষতিসাধন করে।
এভাবে পর্ন দেখতে থাকলে একজন মানুষের তিন ধরনের সমস্যা হতে পারে,

বিষণ্ণতা
পর্ন আসক্তি মানুষের মাঝে বিষণ্ণতা আনে। একপর্যায়ে সে পুরোপুরি বিষণ্নতায় ডুবে যায় এবং সেই বিষণ্ণতা দূর করে সাময়িক আনন্দের আশায় সে বারবার পর্ন দেখতে থাকে। এভাবে পর্ন দেখা থেকে বিষণ্ণতা, আর বিষণ্ণতা থেকে আবার পর্ন দেখা– চলতে থাকে। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাড়ায় যেন ‘ডিম আগে না মুরগী আগে?’ পরিশেষে ঐ ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
অন্যান্য আসক্তির মতো পর্ন দেখার ফলে আমাদের ব্রেইনে ডোপামিন নিঃসৃত হয়, যা আনন্দের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। ডোপামিন নিঃসৃত হতে হতে একসময় তার প্রভাব কমে যায়। তখন একই ধাঁচের পর্ন আর আগের মতো ভালো লাগে না, ফলে আসক্ত ব্যক্তি আরও কড়া ধাঁচের পর্ন দেখতে শুরু করে।

কারও কারও জন্য পর্ন আনন্দদায়ক বিনোদন। তারা যখন ব্যক্তিগত জীবনে অশান্তিতে ভোগে, তখন সাময়িক আনন্দ আর শান্তির খোঁজে এর কাছে ধরা দেয়। ফলে সে বাস্তব জীবনে প্রকৃত আনন্দ, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, মধুর কিছু সম্পর্ক হারিয়ে ফেলে, সবার থেকে দূরে চলে যায়। তাই পর্ন কোনো সমাধান নয়; বরং এটি একটি সমস্যা। এটি সুখ দেয় না; বরং কেড়ে নেয়।

মানসিক উদ্বেগ
পর্ন আসক্তি আপনার সম্পর্কগুলোকে নষ্ট করে, আপনার শরীর, মন ও বুদ্ধিবৃত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পর্নোগ্রাফির কারণে অনেকে নিজেদের নিয়ে, সম্পর্কগুলো নিয়ে, নিজেদের জীবন নিয়ে সুখী হতে পারেনা। সবশেষে তারা কখনও প্রকৃত ভালোবাসা পায় না। তাদের পুরো জগতটাই হয়ে ওঠে বিষাদময়।

এধরনের যৌন আসক্তির ফলে মনে যে অপরাধবোধ আর লজ্জা তৈরি হয় তা ব্যক্তিজীবনকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে আত্মসম্মানবোধ কমে যায়, কোনো কাজ ঠিকমতো করতে পারে না, সবার সাথে ঠিকভাবে চলতেও পারে না। যদি কারো মাঝে আত্মসম্মানবোধ কম থাকে, পর্ন আসক্তি সেটাকে আরও কমিয়ে দিবে, তাকে একদম বিষণ্ণ করে তুলবে, আরও নৈতিক অধপতন ঘটাবে।

বিচ্ছিন্নতা
আমাদের সম্পর্কগুলোকে পর্ন খুব বাজে ভাবে প্রভাবিত করে। আমরা মানুষ, আমরা একা থাকতে পারিনা। আমাদের অবশ্যই সবার সাথে মিলেমিশে থাকা লাগে। সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ থাকা লাগে। সমাজে আমাদের সৌহার্দ্য বজায় রাখা প্রয়োজন। পর্নে দেখানো নোংরা যৌনতার এ সমাজে কোনো প্রয়োজন নেই। মানুষ পর্ন নিয়ে যত বেশি সময় কাটাবে, সামাজিক বন্ধন থেকে সে তত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
পর্ন আসক্তরা বাস্তব জীবনে যৌনমিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পর্ন দেখে তারা যতটা আনন্দ পায়, সহবাস করে ততটা পায়না। তারা বিভিন্ন যৌন সমস্যাতেও ভুগে থাকে। পর্ন আসক্তি তাদেরকে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব থেকে অনেক দূরে নিয়ে যায়। তাদেরকে জনবিচ্ছিন্ন আর একঘরে করে ফেলে।

আসক্তি থেকে মুক্তি
যদি আপনি পর্ন আসক্তিতে ভুগে থাকেন, হতাশ হবেন না। কোনো ভালো বন্ধু, সাপোর্ট গ্রুপ, অথবা থেরাপিস্টের সাহায্য নিন। সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমে আপনাকে সমস্যাটা কী এবং কোথায়- তা শনাক্ত করতে হবে। আসক্তির কারণে কারও জীবন ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না।

পরিশেষে বলতে চাই, সবার মাঝে আমাদের এই আওয়াজ জাগিয়ে তুলতে হবে, ‘পর্নকে না বলুন’। পর্নের মিথ্যা আনন্দে মানুষ যেভাবে ডুবে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তা আর চলতে দেওয়া যায় না। পর্ন মোটেই ভালো কিছু নয়। পর্ন একটি আবর্জনা, একটি অভিশাপ যা আমাদের জীবনকে বিষাক্ত করে তোলে। পর্ন আমাদের কেবল অবাস্তব, অমানুষিক, অশ্লীল, অসভ্য আর অস্বাস্থ্যকর জীবনের দিকে আহবান করে। এই আহবানকে রুখে দেবার এখনই সময়।

অনুবাদ: #teamFAD

COMMENTS

WORDPRESS: 0