নেপালে পর্ন নিষিদ্ধ । ১০ বছরে ধর্ষনের হার বেড়েছে ৩০০%

নেপালে পর্ন নিষিদ্ধ । ১০ বছরে ধর্ষনের হার বেড়েছে ৩০০%

সাম্প্রতিক সংবাদমতে, গত ৪ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে নেপাল কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ২৪,০০০ পর্ন সাইট বন্ধ/ব্লক করে দিয়েছে।
.
সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, “ইন্টারনেটের মাধ্যমে পর্ন এবং অশ্লীল কন্টেন্ট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ ও সৌহার্দ্য নষ্টের সম্মুখীন এবং এতে যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
.
টেলিকম কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে, নেপালে শতকরা ৬০ জন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। জুনে ‘নেপালি টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, ২০১৬-২০১৭ সালে মোট ১,৬৬৭ টি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়। তুলনা করে দেখা গিয়েছে দশ বছরে মামলার সংখ্যা ৩০০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
.
শুধু গত দুমাসেই পুলিশ ধর্ষণ ও ধর্ষণ-চেষ্টা মিলিয়ে ৪৭৯ টি মামলা রেজিস্টার করেছে যা ২০০৮-২০০৯ সালে করা মোট মামলার চেয়ে বেশি। যদিও অনেক নারী পুলিশের কাছে সহিংসতার রিপোর্ট করছে, নারীবাদী সংস্থাগুলো বলছে অনেক ঘটনাই রিপোর্টের আড়ালে থেকে যায়।
.
প্রশ্ন উঠতে পারে পর্ন আর যৌন সহিংসতা কি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ।
.
পর্ন এবং যৌন হয়রানি
==================
সম্প্রতি ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির বরেণ্য অধ্যাপক যৌন সহিংসতা গবেষক ড. জন ডি. ফুবার্ট পর্নোগ্রাফি আর যৌন সহিংসতার সম্পর্ক নিয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,

“কীভাবে যৌন সহিংসতা থামানো যায় এ নিয়ে আমি ২৫ বছর ধরে গবেষণা করছি। ১০ বছর আগে পর্যন্ত আমি এই অপরাধে প্রলুব্ধকারী একটি জিনিসকে ধরতে পারিনি, যদিও সেটা গোপন কিছু ছিল না। সে জিনিসটি যুবকদের কাছে ধর্ষণকে পছন্দনীয় করে তোলে। শুধু তাই নয়, সেটি যুবতী মেয়েদেরকেও বুঝাতে চায় যে তারা ধর্ষণকে স্বাভাবিক ভাবতে শিখুক, সেটা হচ্ছে বর্তমান সময়ের হাই-স্পিড ইন্টারনেটে পাওয়া পর্নোগ্রাফি। পর্নোগ্রাফি নারী-পুরুষের স্বাভাবিক শারীরিক সম্প যৌনতাকে বিকৃত ও অসভ্য রূপে ইয়াং জেনারেশনের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। যুবসমাজ এসব শিখে প্রভাবিত হচ্ছে।” [১]
.
ড. ফুবার্ট বলেন, বর্তমান সময়ের ইন্টারনেট পর্ন আগের দিনের প্লেবয় ম্যগাজিন পর্নের মতো নয়। বিভিন্ন গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্নগুলোর ৮৮% দৃশ্যে নারীর প্রতি মৌখিক বা শারীরিক আগ্রাসন দেখানো হয়। [২] এর চেয়েও খারাপ ব্যাপার হচ্ছে, ৯৫% ক্ষেত্রে যখন পুরুষটি নারীটির প্রতি হিংস্র হয়ে ওঠে অথবা তাকে অবমাননা করে সেক্ষেত্রে নারীকে দেখানো হয় তাতে বাধা দিচ্ছেই না বরং সে তা উপভোগ করছে। [৩]

ড. ফুবার্ট ব্যাখ্যা করেন এভাবে,

“ভেবে দেখুন একজন ১১ বছর বয়সী ছেলে বা মেয়ে এসব কীভাবে গ্রহন করতে পারে? পর্নোগ্রাফি ছেলেদের শেখায় মেয়েদের প্রহার করতে, আর মেয়েদের শেখায় তা পছন্দ করতে। বর্তমানের মূলধারার পর্নে যে হিংস্রতা দেখানো হয় তা অসভ্য নয় বা এসবের সাথে পরিচিত নয় এমন সাধারণ মানুষকে রীতিমত চমকে দেবে। অনেক পর্ন ভিডিওতে একাধিক ব্যক্তিকে একজন মহিলাকে উপভোগ করতে দেখা যায়। ওরাল সেক্স থেকে শুরু করে যা খুশি তা-ই করে তারা (যারা পর্ন দেখেছেন তারা ব্যাপারগুলো ভালোভাবেই জানেন। একটাবার চিন্তা করুন, কতোটা অসাস্থ্যকর কাজ করা হয় সেখানে)। এত জঘন্য বিষয়গুলো কখনোই দেখা উচিত নয়। অর্ধেকের বেশি ছেলে তাদের কৈশোরে পদার্পণ করার আগেই হার্ডকোর পর্ন দেখে ফেলে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, এতে তাদের মানসিকতা মারাত্মকভাবে কলুষিত হয়”। [৪]
.
কোনো কোনো গবেষণা বলতে চায়, “যত বেশি পর্ন দেখবে, তত কম সহিংসতা হবে।” কিন্তু পরবর্তী বিভিন্ন গবেষণায় এটি নিতান্তই ভুল তত্ত্ব হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৫ সালের একটি গবেষণা বলছে, ইন্ডিয়ায় ইন্টারনেট আর পর্ন এর কারণে শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু মেয়েদের ধর্ষণ বেড়ে গিয়েছে।
.
পর্ন এবং যৌন হয়রানির মাঝে সম্পর্কটা এবার ধরতে পেরেছেন?
.
নিষিদ্ধ করাই কি সমাধান?
====================
পর্ন নিষিদ্ধ নেপালই প্রথম নয়। ২০১৬ এর সেপ্টেম্বরে রাশিয়া সরকার অনেকগুলো বড় বড় পর্ন সাইট বন্ধ করে দিয়েছিল। আর মানুষকে উৎসাহিত করছিল যেন তারা বাস্তব জীবনে প্রকৃত মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব দেয়। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ইন্ডিয়ায় পুরো দেশজুড়ে পর্ন নিষিদ্ধের আইন করা হয়েছিল এবং ৮৫০টিরও অধিক পর্ন সাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এটি তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রচার পেয়েছিল। একই সংবাদ যুক্তরাজ্যেও পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে ইন্টারনেট প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য পর্নসাইটে প্রবেশ নিষেধের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
.
আমরা পর্নের বিষাক্ত ছোবল থেকে মানুষকে রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি এবং এর ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরপর তারা কী সিদ্ধান্ত নেন তা তাদের ব্যাপার।
সম্প্রতি নেপালে পর্ন নিষিদ্ধ করার আইনের সাথে আপনি একমত হন বা না হন, কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, পর্ন আর যৌন সহিংসতার মাঝে গভীর যোগসূত্র বিদ্যমান।
.
(আমাদের দেশেও প্রতিনিয়ত ধর্ষণের হার বেড়ে চলেছে। এর পেছনে পর্ন যে একটি অন্যতম কারণ এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা চাই না আমাদের দেশটা নেপাল, ভারত কিংবা অ্যামেরিকায় পরিণত হোক। তাই সময় থাকতেই পর্নের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে কথা বলুন। নিজে বাঁচুন। একটি প্রজন্মকে বাঁচান।)
.
অনুবাদ: #teamFAD

রেফারেন্স:
[১] Foubert, John D. (2017) “The Public Health Harms Of Pornography: The Brain, Erectile Dysfunction, And Sexual Violence,” Dignity: A Journal On Sexual Exploitation And Violence: Vol. 2: Iss. 3, Article 6. DOI: 10.23860/Dignity.2017.02.03.06

[২] Bridges, A. J., Wosnitzer, R., Scharrer, E., Sun, C., & Liberman, R. (2010). Aggression And Sexual Behavior In Best-Selling Pornography Videos: A Content Analysis Update,” Violence Against Women, 16, 1065-1085. Doi: 10.1177/1077801210382866

[৩] Bridges, A. J., Wosnitzer, R., Scharrer, E., Sun, C., & Liberman, R. (2010). Aggression And Sexual Behavior In Best-Selling Pornography Videos: A Content Analysis Update,” Violence Against Women, 16, 1065-1085. Doi: 10.1177/1077801210382866

[৪] Foubert, John D. (2017) “The Public Health Harms Of Pornography: The Brain, Erectile Dysfunction, And Sexual Violence,” Dignity: A Journal On Sexual Exploitation And Violence: Vol. 2: Iss. 3, Article 6. DOI: 10.23860/Dignity.2017.02.03.06

COMMENTS

WORDPRESS: 0