পর্ন স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর

পর্ন স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর

আমরা সবাই অনেক ধরনের সতর্কবাণী লেবেল দেখেছি। একজন ধূমপায়ী যখন সিগারেটের প্যাকেট কিনে, সে তাতে তামাক ব্যবহারের গুরুতর স্বাস্থ ঝুঁকি উল্লেখ করা সতর্কবাণী দেখতে পায়।

সিগারেট কোম্পানিগুলোকে এই নিয়ম অনুসরণ করতে বাধ্য হয়। একজন ধূমপায়ী সিগারেটের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলো জেনেশুনেই সিগারেট কিনছেন—এমনটা নিশ্চিত করার জন্যই এ ব্যবস্থা। যদিও একটি সতর্ককারী লেবেল দ্বারা সিগারেট ক্রয়-বিক্রয় পুরোপুরি থামানো যায় না, তবে এটি ধূমপায়ীদের জন্য সিগারেট ছাড়ার একটি রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করতে পারে।
লক্ষ লক্ষ মানুষ অজ্ঞাতসারে নিজেদের স্বাস্থকে ঝুঁকির সম্মুখীন করছে। অথচ এ সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারনাই নেই। আপনি হয়ত জেনে অবাক হবেন যে, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের স্বাস্থের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি বস্তু নিয়ে আমাদের সতর্ক করা হচ্ছে না।

বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও, আমাদের এই প্রজন্মের তরুণদের স্বাস্থ ঝুঁকির একটি অন্যতম কারণ হলো পর্নোগ্রাফি।
বৈজ্ঞানিক নানা গবেষণার মাধ্যমে আমরা আজ জানতে পারছি যে, পর্নোগ্রাফি একটি আসক্তি। পর্ন আমাদের ব্রেইনের স্বাভাবিক গঠনকে ঠিক ড্রাগের মতোই পরিবর্তিত করে। ফলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি পর্ন মুভির প্রযোজকেরা তাদের ভিডিওগুলোতে সতর্কবাণী লেবেল ব্যবহার করতে বাধ্য হত, তাহলে তা অনেকটা এরকম হতো—

একটু চিন্তা করে দেখুন… সারা পৃথিবীতে আজ লক্ষ-লক্ষ মানুষ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। এই আসক্তির কারণে অনেক পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসছে। অথচ বেশির ভাগ মানুষই এর ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত নন । আমাদের বর্তমান সমাজ যেখানে শারীরিক সুস্থতা নিয়ে অনেক সচেতনতা সৃষ্টি করছে, সেখানে পর্নোগ্রাফির বিষয়টাতে এমন অসচেতনতা সত্যিই দুঃখজনক।
প্রতিদিনই আমরা ক্যান্সার কিংবা অন্য কোনো অসুখের জন্য দায়ী নতুন নতুন সব কেমিক্যালের নাম শুনি। জানি নতুন কোনো ব্যায়াম সম্পর্কে, যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর; অথচ আমরা কোথাও পর্নোগ্রাফির ক্ষতি সম্পর্কে জানতে পারছি না। যে সংস্কৃতি আমাদেরকে সু-স্বাস্থ অর্জনের সকল পথ দেখায় বলে দাবি করে, সে সংস্কৃতিই আমাদেরকে পর্নোগ্রাফির মত অস্বাস্থকর জিনিস নিয়ে সাবধান করে না।

পর্নোগ্রাফি কীভাবে লক্ষ-লক্ষ মানুষকে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে? যেখানে এখনো অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, ‘পর্নোগ্রাফি ব্যবহার করা স্বাভাবিক, এটা আমাদের যৌন চিন্তাধারা বিকৃত করে না। পর্ন দেখা একটি ব্যক্তিগত বিষয়। এর মধ্যে ক্ষতি বলতে কোনো শব্দ নেই।’ কিন্তু আমরা আপনাকে বলতে চাই, এ ধরনের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনা খুব জরুরী হয়ে পড়েছে।

পর্ন দ্বারা কেমন ক্ষতি সাধন হয়? আসুন, জেনে নিই।

শারীরিক:
মানব দেহের ওপর পর্নোগ্রাফির অসংখ্য ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে; এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—স্ত্রীর সাথে যৌন সম্পর্কে অক্ষমতা দেখা দেয়। অথচ তিরিশ বছর আগেও ৩৫ বছরের কম বয়সী পুরুষদের মাঝে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (erectile dysfunction) এর কথা শোনাই যেত না; এই সমস্যা হত শুধুমাত্র বার্ধক্যের কারণে।[1] কিন্তু বর্তমান সময়ে পর্নোগ্রাফি সহজলভ্য হওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে যে, ১৬ বছরের অনেক যুবকেরাও আজ ইরেক্টাল ডিসফাংশনের শিকার।[2] ঘন ঘন পর্ন দেখার ফলে মস্তিষ্কের গঠন এমন হয়ে যায় যে, যৌন চাহিদা পর্নের ওপর নির্ভরশীল হতে থাকে।[3] ফলে একজন পর্ন আসক্ত ব্যক্তি অনেক সময় নিজের স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে উত্তেজনা অনুভব করে না ।[4] আসক্তি বাড়ার সাথে সাথে অন্য আসক্তিকর বস্তুর মতোই আগে দেখা পর্নগুলো তাকে উত্তেজিত করতে পারে না। কারণ তার ব্রেইনের ডোপামিন রিসেপ্টরগুলো (dopamine receptors) নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে থাকে। এমন অবস্থায় একজন পর্ন ইউজার আগের উত্তেজনা ফিরে পেতে আরও এক্সট্রিম পর্নের দিকে ঝুঁকতে থাকে।[5]

আসলে নীল পর্দায় যৌনতার স্বাদ উপভোগ করা পর্ন আসক্ত মানুষগুলো স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলতে থাকে। ভার্চুয়াল সেক্স বাস্তব জীবনে সেক্স এর ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এটা কীভাবে স্বাভাবিক হতে পারে একটু ভাবুন।

মানসিক:
বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও একাকিত্ব বর্তমান বিশ্বে আমাদের প্রধান মানসিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু আপনি কি জানেন, পর্নোগ্রাফি এ সকল সমস্যার একটি অন্যতম কারণ?[6] পর্ন দর্শকরা স্বাভাবিকভাবেই চায় তাদের এই আসক্তি গোপন রাখতে। যার ফলে অনিবার্যভাবে তাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারা ভুগেন নিঃসঙ্গতায়। অন্যান্য অনেক মানসিক সমস্যার পথও খুলে যায় তাদের জন্য।[7] এ ছাড়াও রিসার্চ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পর্ন ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিজের দেহ নিয়ে হীনম্মন্যতা এবং আত্মসম্মানবোধের অভাব দেখা যায়।[8]

সম্পর্ক:
মানুষ সামাজিক জীব। তাদেরকে যৌন চাহিদা দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু পর্নোগ্রাফির কৃত্রিম যৌনতার মাঝে সেই চাহিদা পূর্ণতা পায় না। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, পর্নোগ্রাফির যৌন বিনোদন শুধুই কৃত্রিম না; বরং তা দম্পত্য জীবনের যৌন সম্পর্ককে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। রিসার্চে এসেছে কেউ মাত্র একবার পর্নোগ্রাফি দেখলেও তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা কমে যেতে পারে। এমনকি স্ত্রীকে আগের মত আর আকর্ষণীয় মনে হবে না।[9] রিসার্চের মাধ্যমে আমরা আরো জানতে পারি যে, আমেরিকায় শতকরা ৫৬টি ডিভোর্সের একটি অন্যতম কারণ পর্নোগ্রাফি আসক্তি।[10]
পর্নোগ্রাফি যৌন সম্পর্ককে ভালোবাসা ও সম্পর্কের বন্ধন থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করে, তা শুধুমাত্র বিকৃত যৌনাচারের সন্ধান দেয়; যা আমাদের বাস্তব জীবন থেকে ভিন্ন। জীববিজ্ঞানী গ্যারি উইলসন বলেন: “পর্নোগ্রাফি আমাদেরকে যৌন শিক্ষা দেয়; না বরং আমাদের যৌন জীবনকে পর্নোগ্রাফি দ্বারা প্রতিস্থাপন করে”।
এককথায়, পর্ন ভালোবাসার মৃত্যু ঘটায়। পর্নোগ্রাফি কোনভাবেই স্বাস্থকর না। এটি পুরুষদের যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে, মানসিকতা স্বাস্থকে বিপর্যস্ত করে এবং দাম্পত্য সম্পর্কে ভাঙ্গন ঘটায়। বর্তমান সময়ে পর্নোগ্রাফি আপামর জনসাধারণের জন্য গুরুতর স্বাস্থ ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। এখনই সময়, সকলের সামনে পর্নোগ্রাফির ধ্বংসাত্মক রূপ তুলে ধরার, একে মহামারী হিসেবে জানান দেবার।

আপনি কি করতে পারেন?
অনেকেই আছেন যারা পর্নোগ্রাফির ক্ষতি সম্পর্কে অবগত নন। এই লেখাটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করার মাধ্যমে পর্নোগ্রাফির বাস্তবতা তুলে ধরুন।
.
অনুবাদ: #teamFAD
.
রেফারেন্স:
1 Robinson, M. and Wilson, G. (2011). Porn-Induced Sexual Dysfunction: A Growing Problem. Psychology Today,
July 11; Doidge, N. (2007). The Brain That Changes Itself. New York: Penguin Books, 105.
2 Doidge, N. (2007). The Brain That Changes Itself. New York: Penguin Books, 105.
3 Hilton, D. L. (2013). Pornography Addiction—A Supranormal Stimulus Considered in the Context of
Neuroplasticity. Socioaffective Neuroscience & Psychology 3:20767; Angres, D. H. and Bettinardi-Angres, K.
(2008). The Disease of Addiction: Origins, Treatment, and Recovery. Disease-a-Month 54: 696–721. Doidge, N.
(2007). The Brain That Changes Itself. New York: Penguin Books, 108.
4 Cera, N., Delli Pizzi, S., Di Pierro, E. D., Gambi, F., Tartaro, A., et al. (2012). Macrostructural Alterations of
Subcortical Grey Matter in Psychogenic Erectile Dysfunction. PLoS ONE 7, 6: e39118.
5 Angres, D. H. and Bettinardi-Angres, K. (2008). The Disease of Addiction: Origins, Treatment, and Recovery.
Disease-a-Month 54: 696–721; Zillmann, D. (2000). Influence of Unrestrained Access to Erotica on Adolescents’
and Young Adults’ Dispositions Toward Sexuality. Journal of Adolescent Health 27, 2: 41–44.
6 Flisher, C. (2010). Getting Plugged In: An Overview of Internet Addiction. Journal of Paediatrics and Child Health
46: 557–9; Layden, M. A. (2010). Pornography and Violence: A New look at the Research. In J. Stoner and D.
Hughes (Eds.) The Social Costs of Pornography: A Collection of Papers (pp. 57–68). Princeton, NJ: Witherspoon
Institute; Paul, P. (2007). Pornified: How Pornography Is Transforming Our Lives, Our Relationships, and Our
Families. New York: Henry Hold and Co., 82; Kafka, M. P. (2000). The Paraphilia-Related Disorders:
Nonparaphilic Hypersexuality and Sexual Compulsivity/Addiction. In S. R. Leiblum and R. C. Rosen (Eds.)
Principles and Practice of Sex Therapy, 3rd Ed. (pp. 471–503). New York: Guilford Press.
7 Laird, R. D., Marrero, M. D., Melching, J. A., and Kuhn, E. S. (2013). Information Management Strategies in
Early Adolescence: Developmental Change in Use and Transactional Associations with Psychological Adjustment.
Developmental Psychology 49, 5: 928–937; Luoma, J. B., Nobles, R. H., Drake, C. E., Hayes, S. C., O’Hair, A.,
Fletcher, L., and Kohlenberg, B. S. (2013). Self-Stigma in Substance Abuse: Development of a New Measure.
Journal of Psychopathology and Behavioral Assessment 35: 223–234; Rotenberg, K. J., Bharathi, C., Davies, H.,
and Finch, T. (2013). Bulimic Symptoms and the Social Withdrawal Syndrome. Eating Behaviors 14: 281–284;
Frijns, T. and Finkenauer, C. (2009). Longitudinal Associations Between Keeping a Secret and Psychosocial
Adjustment in Adolescence. International Journal of Behavioral Development 33, 2: 145–154.
8 Flisher, C. (2010). Getting Plugged In: An Overview of Internet Addiction. Journal of Paediatrics and Child Health
46: 557–9; Layden, M. A. (2010). Pornography and Violence: A New look at the Research. In J. Stoner and D.
Hughes (Eds.) The Social Costs of Pornography: A Collection of Papers (pp. 57–68). Princeton, NJ: Witherspoon
Institute; Kafka, M. P. (2000). The Paraphilia-Related Disorders: Nonparaphilic Hypersexuality and Sexual
Compulsivity/Addiction. In S. R. Leiblum and R. C. Rosen (Eds.) Principles and Practice of Sex Therapy, 3rd Ed.
(pp. 471–503). New York: Guilford Press.
9 Bridges, Ana J. “Pornography’s Effects on Interpersonal Relationships.” The Social Costs of Pornography: A
Collection of Papers. Ed. Donna M. Hughes and James Reist. Stoner. Princeton, NJ: Witherspoon Institute, 2010.
104-105.
10 Manning J., Senate Testimony 2004, referencing: Dedmon, J., “Is the Internet bad for your marriage? Online
affairs, pornographic sites playing greater role in divorces,” 2002, press release from The Dilenschneider Group, Inc.

COMMENTS

WORDPRESS: 0