দাসত্ব ছেড়ে জীবনে ০৩

দাসত্ব ছেড়ে জীবনে ০৩

আশির দশকের শুরুর দিকের ঘটনা। আমি ক্যালিফোর্নিয়ায় গেলাম অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য। ভালই আগাচ্ছিলাম। আমার একজন ম্যানেজার ও একজন এজেন্ট ছিল। সেখানে গিয়েই প্রথম সপ্তাহে আমি একটি মোশন পিকচারে কাজ করার সুযোগ পাই। মনে মনে ভাবছিলাম, কি আর আছে জীবনে, এটা তো কঠিন কোন কাজ না।

কিছুদিন পর লেখকদের ধর্মঘট শুরু হল। কয়েকদিনের মধ্যে হলিউডের সবকিছু বন্ধ হয়ে গেল। সেখানকার যত অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, মেকআপ ম্যান, মালী, কাটারার ছিল -কেউ কাজ করছিল না।

একটা সময় সবাই টাকার জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে গেল। আমিও বাদ ছিলাম না। মডেলিং করে কিছু পয়সা কামাতাম, সাথে আরেকটা কাজের অফার পেয়েছিলাম। সেখানকার একজন মেকআপ আর্টিস্ট আমাকে তার কার্ড দিল। বলল, যদি কখনো নুড(nude) কোন কাজ করার ইচ্ছা হয়, এই নাম্বারে একটা কল দিও, ভাল পরিমাণ টাকা কামাতে পারবে। এদিক ওদিক চিন্তা করতে করতে আমি তার কার্ডটা হাতে নিলাম,
মৃদু স্বরে তাকে ধন্যবাদ দিলাম।

খুব ভালোভাবেই জানতাম, যখন আমি এমন কোন কাজের দিকে অগ্রসর হবো, আমার ক্যারিয়ারটা ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে একটা মাস কিছুটা কষ্ট করার পর আমি ঠিকই সেই মহিলার নাম্বারে কল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেদিন আমার পাতে ছিল একটা শিম আর আলুর কৌটা, আমি ছিলাম অনেক ক্ষুধার্ত। তো আমি ফোন দিলাম। তারা বলল, অমুক জায়গায় অমুক সময় চলে এসো। তাই আমি পরের দিন বাইকে চড়ে সেখানে গেলাম এবং আমার জীবনের প্রথম পর্ন করলাম…

সেদিন আমি সেখান থেকে ৪টা কচকচে ১০০ ডলারের নোট নিয়ে বেরিয়েছিলাম। মোটর সাইকেলে চড়ে সোজা বাসায় চলে গেলাম। ভাবছিলাম, কত সহজে আমি এতো ডলার কামিয়ে ফেললাম। কিন্তু এটাও চিন্তা করছিলাম যে, আমি কি করলাম? কোনদিন কেউ না কেউ এটা জানবে।
কিন্তু আমার ভবিষ্যৎ যে এমন হবে তা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। আমি সবসময়ের সেরা পুরুষ পর্নস্টারদের একজন হয়ে গেলাম। ফোন কখনো বাজা বন্ধ হতো না। যতই দিন যাচ্ছিল টাকা বাড়ছিল। আমার মায়ের কোন ধারণাই ছিল না আমি কী করছিলাম? যেদিন শুনলেন, যেন স্তব্ধ হয়ে গেলেন। অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন।
আমি ভুলে গিয়েছিলাম ভালোবাসা কী জিনিস। ভাবতাম, আর কখনো ভালোবাসা অনুভব করতে পারব কিনা কে জানে। মহিলাদের আমি পণ্য হিসেবে দেখতাম। কিসের ভালোবাসা, কিসের অনুভূতি! সবই টাকার খেলা। টাকার জন্য সেক্স। আর আমি ছিলাম একজন প্রসটিটিউট। সব অনুভূতি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছিল। একটা সময়ে এমন হল যে, আমি পর্নে কাজ করতাম, যাতে নিজের অন্তরের জ্বালা নেভানোর জন্য ড্রাগ কিনতে পারি। পর্নোগ্রাফি আমার সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা করেছিল তা হল, মহিলাদের প্রতি আমার ধারণা বদলে গিয়েছিল। কোন মহিলাকে দেখলে মনে হত যেন একটা মাংসপিণ্ড হেটে যাচ্ছে। তাদের সম্মান আর ভালবাসা দেওয়ার ক্ষমতাই যেন আমার হারিয়ে গিয়েছিল।

একদিন আমি শুটিং শেষ করে বের হয়ে এলাম। গাড়িতে উঠলাম। ইঞ্জিন স্টার্ট দিলাম। দুই ব্লক সামনে যেতেই হঠাৎ এক বিষণ্ণতা আমার ওপর ভর করল। আমি গাড়ি থামিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। তখন আমি আসলেই এই রঙ্গমঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছিলাম…
সেই দিনটিই ছিল আমার পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার শেষ দিন। আর কখনো আমি সেদিকে ফিরে তাকাইনি।
নিজের জীবনকে পরিবর্তন করেছিলাম।
বাঁচতে শুরু করেছিলাম।
দেখুন, আমি যদি নিজের অন্তরকে বদলাতে পারি, আপনি পারবেন না কেন?

অনুবাদঃ Minhaz Mohammad

COMMENTS

WORDPRESS: 0