অবসর…

অবসর…

জীবনটা খুবই ছোট। খানিকের যে সময়ের জন্য আমাদের পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে এ সময়টা ক্রমেই গলিত বরফের টুকরোর মত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এই জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত মূল্যবান। অথচ সময়গুলো আমরা কিসে ব্যয় করছি? অবসর সময়ে বিনোদনের খোঁজে যে উদ্দেশ্যহীন ব্রাউজিং আমরা করতে থাকি, দিন শেষে তা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার এক জগতে।

আজকাল মানুষ বিনোদনের ক্ষেত্রে টিভির চেয়ে ইউটিউবে নাটক, মুভি বা গানের ভিডিও দেখাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। কারণ যখন যে গান বা মুভি দেখার ইচ্ছা হয় তা ই সার্চ দিয়ে দেখা যায়। কিন্তু এখনকার গান, মুভির যে অবস্থা, কোন সফটকোর সিন চোখের সামনে পড়াটা মুহূর্তের ব্যাপার। আর যে ব্যক্তি সারাদিন ইউটিউবের নাচ-গানে ডুবে থাকে তার রেকমেন্ডেড ভিডিওগুলোতে কি আসে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অশ্লীল কোন কিছু দেখার উদ্দেশ্য না থাকলেও “দেখুন! অমুকে কি তোলপাড় করে ফেললো” কিংবা “কি এমন বললেন তমুক” টাইপ টাইটেলের ভিডিওতে কৌতূহল বসত অনেকেই ক্লিক করে বসে। পাশেই থাকে ডজন ডজন অশ্লীল থ্রাম্বনেলওয়ালা ট্রিগার। একটার পর একটা ভিডিও চলতে থাকে। একসময় ইচ্ছে করে আরও খোলামেলা কিছু দেখতে।

শেষপর্যন্ত সেই পর্ন সাইটই গন্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। এলোমেলো হয়ে যায় সব পরিকল্পনা, হারিয়ে যায় বাস্তবতা। মন শুধু তখন পর্নের ফ্যান্টাসি ওয়ার্ড এই ঘুরে বেড়াতে চায়। পেতে চায় পূর্বের সেই সন্তুষ্টি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যায় শুধু আগের সেই উত্তেজনা ফিরে পাওয়ার বাসনায়। কিন্তু কিছুক্ষণের উত্তেজনা অনুভবের পর অন্তরের আকাশে নেমে আসে কালো মেঘ। হতাশা আর হতাশায় ছেয়ে যায় প্রতিটা মুহূর্ত।

আচ্ছা, অবসর সময়ে গান, মুভি দেখা কিংবা উদ্দেশ্যহীনভাবে নেট ব্রাউজ করা ছাড়া কি আমাদের অন্য কোন কাজ নেই? একটু ভেবে দেখুনতো, আপনার কাছের মানুষগুলোকে আপনি কতোটা সময় দেন? আপনি যতক্ষণ বাহিরে থাকেন আপনার মায়ের অন্তরটা খাঁ খাঁ করে এই ভেবে, যে ছেলেটা বা মেয়েটা আমার কখন বাসায় ফিরবে? অথচ বেলা শেষে বাড়ি ফিরেই আমরা চারকোণা একটা স্ক্রিনে ডুব মারছি। সেই সময়টা যদি মায়ের সাথে গল্প করা হত কিংবা ভাই-বোনের সাথে হাসি-ঠাট্টা করা হত কতোই না ভাল হত। এক একটা সুন্দর স্মৃতি মনে করেই কাটিয়ে দেয়া যেত আরও কিছু ভালো সময়।

যতই দিন যাচ্ছে ছোট্ট একটা ডিভাইসের কাছে হার মেনে যাচ্ছে মানবতা। হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দর স্বপ্ন আর ভালোবাসার অনুভূতিগুলো। অথচ চাইলেই আমরা অবসরটাকে আনন্দময় করে তুলতে পারতাম, প্রিয়জনদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোকে এতোটাই অর্থবহ করে তুলতে পারতাম যার প্রভাব সারাটা দিন জুড়ে আমাদের অন্তরে প্রশান্তি দিত।

আমি বলছিনা এই যুগে আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। তবে স্মার্টফোন যদি আপনাকে প্রিয়জনদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেয় কিংবা জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবার সময় না দেয় সেক্ষেত্রে স্মার্টফোনকে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া অন্য সময়গুলোতে দূরে সরিয়ে রাখাটাই শ্রেয়।

COMMENTS

WORDPRESS: 0