আলো আঁধারে

আলো আঁধারে

রাহিদ হঠাৎ খুব ঘামাচ্ছে। ক্লাসের এসিতেও কোন কাজ হচ্ছেনা। পাশের মেয়েটার দিকে যতবারই চোখ পড়ছে ততোই তার হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। কি করলাম আমি? এতদিন আল্লাহর ভয়ে দৃষ্টি নত রেখেছিলাম। আর আজ আমি…

এই ভেবে তার প্রতিটা মুহূর্তে মনে হচ্ছিলো সে জাহান্নামের পথে পা বাড়িয়েছে। সে ভাবল,- এখন যদি আমি মারা যাই, নিশ্চিত জাহান্নামে যাব। না.. এ হতে পারেনা। আমি এ কাজ করিনি..

পাশের যে মেয়েটা তার হার্ট বিট বাড়িয়ে দিচ্ছিল সে মেয়েটার সাথে রাহিদ জিনা (fornication) করে ফেলেছে। সে নিজেও বুঝতে পারছেনা, কিভাবে তার দ্বারা এ কাজ সম্ভব হল। গত এক বছর যাবত সে কোন মেয়েকে ছোঁয়াত দূরের কথা, কার সাথে কথাও বলেনি। ফেসবুকে যত মেয়ে ফ্রেন্ড ছিল সবাইকে ছাটাই করেছিল, মিউজিক-মুভি সব দেখা বাদ দিয়েছিল শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়। আর আজ কিনা সে জিনার মতো ইসলামের একটা মেজর পাপ করে বসে আছে। যতবারই সেই ক্ষণ নিয়ে চিন্তা করছে তার মন বিষণ্ণতায় ছেয়ে যাচ্ছে।

কাছের কিছু বন্ধু তার এই অবনতি সম্পর্কে জেনে গেছে। নামাযের সময় মসজিদে যাওয়ার পথে সাগরের সাথে দেখা। লজ্জায় রাহিদ তার দিকে তাকাতে পারছিলনা।
সাগর বলল,- বন্ধু! তুই না একদিন রসূল (সাঃ) এর এক হাদীস শুনিয়েছিলি যে “জিনাকারির (fornicator) দোয়া কবুল হয়না।” মসজিদে গিয়ে আর কি হবে? এ বলে সাগর ধিক্কার দিতে দিতে চলে গেল। রাহিদ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেনা। রাস্তার পাশে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নামাজের সময় চলে যাচ্ছে। সে জানে আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন। এরপর যদি সে হারাম রিলেশনে না জড়ায় তাহলে আল্লাহ তার দোয়াও কবুল করবেন। তবুও সে কেন জানি মসজিদে যাবে কি যাবেনা এ নিয়ে দ্বিধান্বিত। এর মধ্যে হঠাৎ একটা কুকুর এসে তার হাত কামড়ে ধরল।

সেদিন আর তার মসজিদে যাওয়া হয়নি।

১ সপ্তাহ পর..
সে নিজেকে আবিষ্কার করলো এক ডিজে পার্টিতে। মিউজিক, রঙবেরঙের আলো, আশেপাশে সবাই অশ্লীলতায় ভরপুর। সে ভাবছে,- আমি এখানে কি করছি, কি হচ্ছে এসব?
পার্টির আলোআঁধারি পরিবেশে একটা মেয়ে তার কাছে এসে বসলো। মেয়েটা তার পূর্ব পরিচিত। কলেজে ভালো ফ্রেন্ড ছিল। সে তার হাত ধরে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,- ওয়েলকাম টু দ্যা পার্টি, সুইটহার্ট!

রাহিদের আর বুঝতে বাকী রইলনা যে সে হেদায়েতের পথ থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে। আগের সব বন্ধুদের সাথে হ্যাংআউট, ফ্রি মিক্সিং সব নরমাল হয়ে যাচ্ছে। তবুও সে প্রবৃত্তির খাঁচায় বন্ধী থেকে দূরের সেই রাহিদকে দেখতে পায়। সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে থাকাকালে কতো সুন্দর ছিল তার জীবনটা। কতো শান্ত ছিল তার হৃদয়।

এই হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে তার ঘুম ভাঙল। এতক্ষণে ঘেমে গোসল হয়ে গিয়েছে। বুক ছিঁড়ে মনে হচ্ছিলো কলিজাটা বেরিয়ে আসবে। পুরো ঘটনাটাই ছিল স্বপ্ন, ব্যাপারটা নিশ্চিত হবার পর সে শস্তির নিশ্বাস ফেললো। হাজার শুকরিয়া আদায় করলো আল্লাহ সুবাহানাহু তা’আলার কাছে।

যদিও সে সব হারাম কাজ ছেড়ে দিয়েছিল, একটা জায়গায় সে বার বার আটকে যাচ্ছিল। তা হল চোখের জিনা। মাঝেমাঝে ফেসবুকে রেকমেন্ডেড মডেলদের পেইজ বা ইউটিউবে কোন অশ্লীল ভিডিওর লিঙ্ক তার জন্য পর্নের ট্রিগার হিসেবে কাজ করতো।

আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ” তোমরা জিনার নিকটবর্তী হয়ো না, এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। ”
[সূরা বানী ইসরাইলঃ ৩২]

পর্ন দেখা চোখের জিনা। সপ্তাহে হোক বা সেটা মাসে একবার কোন বৃষ্টিস্নাত রাতে হোক এই পর্ন আপনাকে নিয়ে যেতে পারে আসল জিনার দিকে।

রাহিদের স্বপ্ন এমনই ইংগিত প্রদান করে। সে বুঝতে পারলো এই স্বপ্ন আল্লাহ তা’আলার দেওয়া একটা ওয়ার্নিং। তাই সে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় চোখের জিনা থেকে দূরে থাকার জন্য সব ধরনের স্টেপ নিয়েছে। কারণ দিনের শেষে আল্লাহ তা’আলাই আমাদের হেদায়েতের পথে থাকতে সাহায্য করবেন।

COMMENTS

WORDPRESS: 0